কারাগারে খালেদা জিয়ার ৩৬৫ দিন

বিএনপি, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 13:15:24

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ৭৪ বছর বয়সে বন্দী রয়েছেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে। বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তাঁর কারাবাসের এক বছর তথা ৩৬৫ দিন পূর্ণ হলো।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। ঐ মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে ৩০ অক্টোবর সাজা পাঁচ থেকে ১০ বছর বৃদ্ধি করে রায় দেন হাইকোর্ট।

এরপর অপর একটি মামলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। নাইকো, গেটকো, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির দুর্নীতির মামলাসহ আরও ৩২টি মামলা চলমান রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

বিএনপির নেতারা অভিযোগ করে বলছেন, খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত করা হচ্ছে। এক মামলায় জামিন নিলে অন্য আরেকটি মামলায় জামিন বাতিল করা হয়েছে। হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ আবার জামিন স্থগিত করেছে‌। পরে আপিল বিভাগ জামিন দিলে নিম্ন আদালত আরেকটি মামলায় জামিন আটকে দিয়েছে। শুধুমাত্র তাকে হেনস্থা, অপদস্থ করতেই মিথ্যা বানোয়াট মামলা সাজানো হয়েছে।

৭৪ বছর বয়সী এই নেত্রী নি:সঙ্গ জীবনযাপন করছেন কারাগারে। সেখানে তিনিই একমাত্র কয়েদি। সঙ্গে রয়েছেন পরিচারিকা ফাতেমা। পারিবারিক সূত্র বলছে, নামাজ, দোয়া-দরুদ, কোরআন তেলাওয়াত, পত্রপত্রিকা পড়েই সময় কাটান খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন কারাবন্দির পরেও তার মনোবল এতটুকুও টলেনি।

যেভাবে কারাবন্দি হন খালেদা
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন খালেদা জিয়া। বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণা শেষে বকশিবাজার কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে অবস্থিত বিশেষ জজ আদালত থেকে কারা হেফাজতে নেওয়া হয় নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে। বর্তমানে সেখানেই রয়েছেন তিনি।

চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে খালেদা জিয়া
২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় এবং দেওয়া হয় ফিজিও থেরাপিসহ নানা চিকিৎসা।

চিকিৎসা শেষে ৮ অক্টোবর তাকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখিয়ে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে পাঠানো হয়। ঐ সময় যদিও দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, ‘প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করে ছাড়পত্র ছাড়াই খালেদা জিয়াকে করাগারে নেওয়া হয়েছে।’

কারাগারে খালেদার ঈদ
গত ঈদ-উল ফিতর ও ঈদ-উল আযহা দুই ঈদ কারাগারে কেটেছে খালেদা জিয়ার। এ সময় পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেন। তারা বাসায় রান্না করা খাবার দাবার নিয়ে কারাগারের ভেতরে নিতে পারেননি স্বজনেরা। এছাড়াও দলের নেতাকর্মীদের ফল হাতে করেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল কারাগারের সামনে।

কারাগারের আদালতের কাঠগড়ায় খালেদা
কারাবন্দি থাকা অবস্থায় একই কম্পাউন্ডে অবস্থিত কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে নেওয়া খালেদা জিয়াকে। সেখানে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কুমিল্লার নাশকতা মামলাসহ বেশকিছু মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বিশেষভাবে স্থাপিত অস্থায়ী এই আদালতে।

ছেলে ও স্বামীর মৃত্যাবার্ষিকীতে কারাগারে

স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষীকিতে প্রতিবছর মাজার ও কবর জিয়ারত করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এবার তাঁর ব্যতিক্রম। কারাবন্দি থাকায় দলের নেতাকর্মীরাই এ দিনটি পালন করেছে। ছেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে কারাগারে খালেদা জিয়া অঝোরে কেঁদেছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কারাগারে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন দলের চেয়ারপারসন। সুচিকিৎসা না পাওয়ায় তার পুরনো রোগ বেড়ে গেছে। খালেদা জিয়া আর্থারইটিসের ব্যাথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাত নাড়াচাড়া করতে পারেন না।’

‘সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস এর জন্য কাঁধে প্রচণ্ড ব্যাথা, যা রেডিয়েট পর্যন্ত পৌঁছেছে। বেড়েছে হিট জয়েন্টের ব্যাথাও। চোখের ব্যাথা বেড়েছে, পা ফুলে গেছে। একা একা হাঁটতেও পারছেন না।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ। চোখেও প্রচণ্ড ব্যাথা। তার পা ফুলে গেছে। অথচ তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘এবার ক্ষান্ত দেন। একজন গুরুতর অসুস্থ বয়স্ক নেত্রীর ওপর আর জুলুম করবেন না। একটি বছর কারারুদ্ধ করে রেখে অত্যাচার করছেন। এবার মুক্তি দিন।'

এদিকে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। পরের দিন ঢাকার বাইরে সারাদেশে একই কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

এছাড়া খালেদা জিয়ার প্রথম কারাবন্দি বার্ষিকীতে মুক্তির দাবিতে ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দেশব্যাপী মসজিদে মসজিদে দোয়া কর্মসূচি দিয়েছে গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন। ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘কারামুক্তি বন্ধন’ কর্মসূচি দিয়েছে আইনজীবীদের এই সংগঠনটি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর