ছাত্রদের জীবন দেয়া সাফল্যকে গনিমতের মাল মনে করবেন না। রক্তে ভেজা এই সাফল্য ভাগবাটোয়ারার বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
সোমবার (৭ অক্টোবর) জাপার বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা জীবন দিয়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে। ছাত্রদের রক্তে দেশের রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। জীবন দিয়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করার কৃতিত্ব শুধুই ছাত্রদের। যারা সরাসরি বিরোধিতা করেছে, তারা ছাড়া আমরা সবাই এই ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় সমর্থন দিয়েছে।
জিএম কাদের বলেন, আন্দোলনের সময় আমি বলেছিলাম, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে বৈষম্য। আমাদের শহীদ মিনার হচ্ছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন দেয়ার প্রতীক। ছাত্রদের শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নিতে বলেছি। যখন ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে আটক করা হলো, আমরা তাদের মুক্তি দাবি করেছি। ছাত্র আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি আমরা। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি আমি। জাতীয় পার্টি যৌথসভা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সর্বতোভাবে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যে ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছে। সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। গতরাতে মোহাম্মদপুর থেকে আমাদের জাতীয় পার্টি নেতা রফিকুল ইসলামকে এমন একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এই গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা নিরপরাধ রফিকুল ইসলাম সেলিমের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। কিন্তু নির্বাচনের পরও যেন দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে। আমরা শুধু নির্বাচনের দিনের জন্য গণতন্ত্র চাই না। সুন্দর নির্বাচনের পর যেন ক্ষমতায় গিয়ে কোনো দল দানবে পরিণত না হয় সেজন্য শাসন পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। কোনো দল ক্ষমতায় গিয়ে যেন সংবিধান পরিবর্তন করে পরবর্তী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সংবিধানের পরিবর্তন চাই না। তবে, আমরা সংবিধানের পরিবর্তন চাই। সংবিধানের ক্ষমতা বলে যেন ক্ষমতাসীনরা আর দানব না হতে পারে। আমরা সংবিধানের পরিবর্তন চাই, যাতে দেশের মানুষ আজীবন গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে পারে। দেশের মানুষের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করতেই আমরা সংবিধানের সংশোধন চাই।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু’র সভাপতিত্বে সম্পাদকমন্ডলীর মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, আলমগীর সিকদার লোটন, মনিরুল ইসলাম মিলন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান আতা, ইঞ্জিনিয়ার মাইনুর রাব্বী চৌধুরী রুম্মন, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আজমল হোসেন লেবু, যুগ্ম মহাসচিব মো. নোমান মিয়া, মো. সামছুল হক, হাজী সালাউদ্দিন খোকা মোল্ল্যা, মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, আব্দুল হামিদ ভাষানী, শামীম আহমেদ রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল চন্দ্র দাস, মো. হেলাল উদ্দিন, এ্যাড. মো. জুলফিকার হোসেন, মো. শাহজাহান মানসুর, মো. হুমায়ুন খান, মো. আনোয়ার হোসেন তোতা, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, মোস্তফা কামাল ফারুক, মো. আনিস উর রহমান খোকন, আবু জাফর মো. ওলিউল্ল্যাহ চৌধুরী মাসুদ, কাজী আবুল খায়ের, মো. জয়নাল আবেদীন, এমএ হান্নান, সম্পাদকমণ্ডলী মাসুদুর রহমান মাসুম, এমএ রাজ্জাক খান প্রমুখ।