যে কারণে ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে আসেননি বাম নেতারা

বিবিধ, রাজনীতি

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 21:42:38

সরকার দলীয় জোট ব্যতীত বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বেশিরভাগ দলই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। এই অভিযোগে বেশ কয়েকদিন আগে বাম ধারার জোটটি গণশুনানিও করেছে। গতকাল (২২ ডিসেম্বর) করেছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শুনানিতে জোটটির পক্ষ থেকে বাম নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হলেও তাদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। দাওয়াতে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে বাম নেতারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন। কেউ বলছেন ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিলেন, কেউবা ঢাকার বাইরে ছিলেন।

কয়েকজন বাম নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এসব কথা বললেও ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে অংশ না নেওয়ার প্রধান কারণ-বাম জোটে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ পায়নি ও নেতাদের আগ্রহও ছিল না। অথচ সরকারি দল ভোটে কারচুপি করেছে এ বিষয়ে বাম জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একমত।

ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে অংশ না নেওয়া সম্পর্কে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বার্তা২৪.কম'কে বলেন, 'আমি একটু ঢাকার বাইরে, এজন্য যেতে পারিনি। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে শুনানি করেছি, তারা তাদের অবস্থান থেকে শুনানি করেছেন। তাছাড়া আমাদের এক সাথে কাজ করার সুযোগ আছে কিনা বা দাওয়াতে যাবো কিনা এ নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা করার সুযোগ হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের সাথে এক হয়ে কাজ করার মতো কোনো সিদ্ধান্তও বাম জোটে হয়নি।’

এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বাম নেতা জানিয়েছেন, গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি তারা খুব বেশি গুরুত্ব দেননি।

তবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানির সাফল্য কামনা করে বার্তা২৪.কম'কে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের যারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন, দাওয়াত দিয়েছেন, তাদের আমরা ধন্যবাদ দিয়েছি। গণশুনানির সাফল্য কামনা করেছি। আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি- গণশুনানির পর তারা রাজপথে কী কার্য্যকর কর্মসূচি ঘোষণা করবে সেটার ওপর। কর্মসূচি থাকলে পরবর্তীতে আন্দোলনের জায়গাটা কিভাবে সমন্বয় করা যায় সেগুলো নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে আলাপ-আলোচনা করবো। এ বিষয়ে আমরা ইতিবাচক।’

সিপিবি'র সাধারণ সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বার্তা২৪.কম'কে বলেন, ‘আমরা নিজেরাই তো গণশুনানি করেছি। ঐক্যফ্রন্টের শুনানিতে যাবো কেনো? আমরা ওনাদের সঙ্গে জোট করছি না তো। আর এই প্রশ্নটা আসছে কেনো যে, গণশুনানিতে আমরা যাইনি কেনো? ওদের কি আছে, যে ওখানে যেতে হবে। দাওয়াত তো সবাই দেয়। ওখানে আমাদের যাওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।’

জেএসডি'র সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আব্দুর রব বার্তা২৪.কম'কে বলেন, ‘ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে উনারা আমাদের সাথে একটা যুগপৎ আন্দোলনে আসতে চাচ্ছেন। উনারা বিচ্ছিন্নভাবে কিছুই করেন না, উনাদের মোর্চায় (জোটের বৈঠকে) সিদ্ধান্ত নেন। আমার সাথে কমরেড সেলিম, খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, সাইফুল হক, হায়দার আকবর খান, সুধাংশু চক্রবর্তীর কথা হয়েছে। আমি আশাবাদী দাওয়াতে না আসলেও ভবিষ্যতে আন্দোলন কর্মসূচিতে উনারা আমাদের সাথে থাকবেন। উনারা ঐক্যফ্রন্টের সাথে এক মঞ্চে না আসলেও যে কোনো পদ্ধতিতে আন্দোলনে থাকবেন। এক মঞ্চে না থাকলেও যুগপৎভাবে আন্দোলনে থাকবেন তারা।’

গণশুনানিতে বাম জোটের অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বার্তা২৪.কম'কে বলেন, ‘আমরা তো তাদের ইনভাইট করেছি। কেউ যদি অনুষ্ঠানে না আসে তাহলে তো জোর করে আনতে পারি না। এটা তাদের ওপর নির্ভর করে। আমাদের অনুষ্ঠান ছিল দাওয়াত দিয়েছি। এখন সবাই আসবে এমন তো আশা করতে পারি না। অনেকে ব্যক্তিগত কাজের জন্য আসতে পারেন নাই। খালেক সাহেব বলেছিলেন, যদি কনফারেন্স করেন তাহলে আসতে পারি। একজন বলেছিলেন, যদি সময় করতে পারি তাহলে আসবো। মেইনলি এটা ছিল ঐক্যফ্রন্টের প্রোগ্রাম।’

প্রসঙ্গত, ৮টি দল নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত। বাম নেতাদের মধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি'র নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি, বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান, বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ (মুবিনুল) নেতা মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, সুধাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা মোশরেফা মিশু এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হককে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর