কর্মী সংকটে বগুড়ায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা

বিএনপি, রাজনীতি

গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বগুড়া, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-24 20:35:42

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণায় কর্মী পাচ্ছেন না বগুড়ায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার ভয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির নেতারা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না।

ফলে ঐসব প্রার্থীরা নিরুত্তাপ প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর কর্মী সংকটের কারণে ইতোমধ্যে বিএনপির এক বিদ্রোহী প্রার্থী বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন। আরেক উপজেলায় বিএনপি সভা ডেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা ও তাকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর এই সুযোগ কৌশলে কাজে লাগিয়ে ভোটে জেতার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।

বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত বগুড়া জেলায় বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেননি। ১২টি উপজেলার মধ্যে সাতটিতে বিএনপি ও পাঁচটিতে জামায়াত থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এবার বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন বয়কট করে দল থেকে কোনো প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ কারণে জামায়াতের পাঁচ জন উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাত জনের মধ্যে ছয় জন প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকেন। শুধু সারিয়াকান্দি উপজেলা থেকে নির্বাচিত বিএনপির চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান হিরু মন্ডল দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। এছাড়াও আরও কয়েকটি উপজেলায় বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হন।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ও ঐসকল প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করায় তিন দফায় ৩০ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর এরপর থেকেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে বহিষ্কার আতঙ্ক দেখা দেয়। ফলে তারা নির্বাচনী মাঠ থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন। এতে করে বিপাকে পড়েন প্রার্থীরা। কর্মী সংকটে পড়েন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতারা, যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

ইতোমধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মাসুদার রহমান হিরু মন্ডল দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচন করা ভুল হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে সারিয়াকান্দি উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির নেতারা বলছেন কর্মী না পাওয়ায় ও ভোটের দিন কেন্দ্রে কোনো এজেন্ট পাবেন না বুঝতে পেরে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

ধুনট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৌহিদুল আলম মামুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সভা করে নেতাকর্মীদেরকে বিদ্রোহী কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যারাই দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে, তাকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এছাড়াও যে সেন্টারে ভোটারের উপস্থিতি যত কম হবে সেই এলাকার বিএনপি নেতাদেরকে পুরষ্কৃত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম এবার প্রার্থী হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে। আর প্রার্থী হওয়ার কারণে বিএনপির দলীয় দুইটি পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলায় তিনি একমাত্র নারী প্রার্থী, যিনি পুরুষ প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ইতোমধ্যে তার উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে তিনি মামলা করেছেন ছাত্রদলের নেতাদের নামে। বিএনপির নেত্রী হিসেবে বিউটি বেগম পর পর দুইবার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন, দল বহিষ্কার করায় কর্মী সংকটে পড়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের হামলার আশঙ্কায় প্রচারণা চালাচ্ছেন ভয়ে ভয়ে।

বিউটি বেগম বার্তা২৪.কমকে জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরাই তাকে বাধা দিচ্ছে। তার সাথে আওয়ামী লীগের একটি  অংশ কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে জয় সুনিশ্চিত।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর