কে হচ্ছেন জাপার কো-চেয়ারম্যান?

বিবিধ, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-28 23:53:16

জিএম কাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে। শূণ্যপদে (কো-চেয়ারম্যান) কে আসছে এ নিয়ে চলছে নানা রকম কানাঘুষা। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের নাম।

বিশেষ করে হাওলাদারের কয়েকদিনের ভূমিকায় বিষয়টিকে অনেকে অবধারিত বলে মনে করছেন। খুব ঘনঘন আসা যাওয়া করছেন। যেদিন জিএম কাদেরকে সরানো হয় সেদিনও লম্বা সময় ধরে এরশাদের বাসা প্রেসিডেন্ট পার্কে ছিলেন জাপার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করা হাওলাদার।

প্রেসিডেন্ট পার্ক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেছেন, হাওলাদার জানে এরশাদকে কিভাবে বাগে আনতে হয়। এরশাদের সঙ্গে ড্রেস ম্যাচিং করে পড়া নিয়ে পার্টিতে নানা রকম কথা প্রচলিত রয়েছে। এরশাদ কি পড়ে বের হচ্ছেন সে বিষয়ে কৌশলে খোঁজ নিয়ে তেমন পোশাক পড়েই হাজির হন একই অনুষ্ঠানে।

হাওলাদারের মধ্য বাড্ডার (ইউটার্ণ সংলগ্ন) জমিতে এতিমখানা, মসজিদ ও এরশাদের সমাধি কমপ্লেক্স করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর এতেই কাতর হয়ে পড়েছেন সাবেক সেনা শাসক এরশাদ। সরাসরি হ্যাঁ বা না কোনোটাই না জানালেও হাওলাদারের প্রস্তাবে এরশাদ নাকি নিমরাজি এমনটাই জানিয়েছে এরশাদের ঘনিষ্ঠরা।

একদিন নাকি কথাটি খোদ এরশাদেই তুলেছিলেন, আমি মারা গেলে তোমরা কোথায় কবর দিবা। আর তখনই হাওলাদার সমাধি কমপ্লেক্স গড়ার প্রস্তাব দেন। আর এরশাদ তখন অনেক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছিলেন হাওলাদারকে।

তবে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রংপুরে এক সভায় মৃত্যুর পরে বাবা-মায়ের কবরের পাশে নিজের কবর দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন স্যার (এরশাদ)। এখন কোনো মত পরিবর্তন করেছেন কি না আমার জানা নেই।’

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পরে জাতীয় পার্টিতে ডোনার হিসেবে হাওলাদারের অনেক সুনাম রয়েছে। যে কোনো কর্মসূচি হলে নেতাকর্মীদের আপ্যায়ন করার বিষয়ে হাওলাদার ছিলেন অনেক উদার। কিন্তু সেখানে জিএম কাদের খুবই কার্পণ্য দেখিয়েছেন। বিশেষ করে বিগত সংসদ নির্বাচনে হাত গুটিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের ডাকা হয়েছিল একটি বিশেষ মতবিনিময় সভাতে। সকাল ১১টায় বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল নাগাদ। তাদেরকে মধ্যহ্নভোজ না করানোয় তখন অনেকেই ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

বিগত নির্বাচনের পূর্বে হঠাৎ মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় হাওলাদারকে। অনেকেই এখন আড়ালে আবডালে জাপার জন্য হাওলাদারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে দল চালানোর খরচাপাতির জন্য তাকে অনেকেই অপরিহার্য বলে উল্লেখ করছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটলে বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

আবার কেউ কেউ মনে করেন জিএম কাদেরই আবার ফিরে আসতে পারেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই যদি আবার ফিরে আসতে চান তবে তার পক্ষে ভাইকে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। একই সঙ্গে রংপুর বিভাগীয় নেতাদের চাপও রয়েছে। আরেক পক্ষ রয়েছেন যারা কোনো ভবিষ্যৎ বাণী করতে নারাজ। তারা মনে করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মনকে পড়া বড়ই কঠিন। তার সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা জটিল। কারণ উনি অনেককে অনেক পদে বসিয়েছেন যা কয়েক মিনিট আগেও কেউ ভাবতে পারে নি।

গত নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে মহাসচিব হাওলাদারকে সরিয়ে দেন। সকল ভবিষ্যৎ বাণীকে অসার প্রমাণ করে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব নিযুক্ত করেন। আবার মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে হাওলাদারকে প্রমোশন দিয়ে তার পার্টির চেয়ারম্যানের অবর্তমানে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেন। হাওলাদারই তখন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন।

গঠনতন্ত্রে পদ না থাকলেও ২০১৬ সালে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান এবং পরে রওশন পন্থীদের চাপে রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করেছিলেন। যোগদানের আগেই পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য করা, ৪১ সদস্যের প্রেসিডিয়ামের সভায় এখন ৪৬ জন রয়েছে। এমন অনেক তুঘলকি কারবারের কারণে এরশাদকে নিয়ে কেউ আগাম ভবিষ্যৎ বাণী করতে নারাজ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর