বিএনপির কাউন্সিল কবে?

বিএনপি, রাজনীতি

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:21:02

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র নেতাদের মধ্যে দল পুনর্গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। সে অনুযায়ী কাজ শুরুও করেছে দলটি। কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করতে হলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অবশ্যই কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে।

চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মধ্যেই কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে করা হবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ বা মাস এখনও ঘোষণা করা হয়নি। দলটির নেতারা বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব, কাউন্সিলের আয়োজন করে নেতৃত্ব ঠিক করবে বিএনপি।

গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে দলটি। কারণ হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ‘তারা ভোট ডাকাতি করে নির্বাচনের ফল নিজেদের করে নিয়েছে।' বিএনপি এমন অভিযোগ ও সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেও দলের সিনিয়র নেতারা নির্বাচনের পর দল পুনর্গঠনের কথা বারবার বল আসছেন। এজন্য সিনিয়র নেতারা সমালোচনার মুখেও পড়ছেন। একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচি না থাকাতে ক্ষেপেছিলেন অঙ্গসংগঠনের নেতারা। সম্প্রতি দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও মত পার্থক্য দেখা যায়।

এ অবস্থায় দলটির নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আন্দোলন করতে হলে প্রয়োজন হবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মত পার্থক্য, অঙ্গ সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলে ঐক্যবদ্ধ ও কঠোর আন্দোলন সম্ভব নয়। ফলে কাউন্সিল করা অত্যাবশ্যক হয়ে গেছে বিএনপির জন্য।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। সেসময় ৫০২ জনকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে ১৯টি পদ রাখা হয়। কিন্তু কাউন্সিলের পর থেকেই দু’টি পদ শূন্য। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটির মেয়াদ তিন বছর। সে হিসেবে বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এ বছরের ১৯ মার্চ। তবে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির শেষে কোনো কারণে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত না হলে বর্তমান কমিটি দায়িত্ব পালন করতে পারবে, যা এখন চলছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত প্রায় এক যুগ ধরে বিদেশে (লন্ডন)। এছাড়া মারা গেছেন এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম ও আ স ম হান্নান শাহ। সালাউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করছেন। আর ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া কারাগারে। তবে স্থায়ী কমিটির বাকি ১০ সদস্য সক্রিয় থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে নিস্ক্রিয় রয়েছেন।

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর স্থায়ী কমিটির দু’টি পদ ফাঁকাসহ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুব বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও কেউ জায়গা পাননি। এর মধ্যে গত ১৬ মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন দল থেকে পদত্যাগ করেন।

কবে কাউন্সিল হবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, কাউন্সিলের এখনও তারিখ ঠিক করা হয়নি। কাউন্সিল করার আগে অনেক প্রস্তুতির দরকার হয়। এগুলো নিয়ে আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান জেলা পর্যায়ের নেতা ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বলছেন। এগুলো প্রস্তুতির অংশ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বার্তা২৪.কমকে বলেন, দল পুর্নগঠন একটা সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা। গঠনতন্ত্রের বিধিবিধান অনুযায়ী আমরা পুনর্গঠন করি। আর দল পুনর্গঠন আন্দোলনের লক্ষ্যেই; যেটা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। আর তার মুক্তির মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

কাউন্সিলের আগে যদি খালেদা জিয়া মুক্ত না হতে পারেন তাহলে কি তাকে ছাড়াই কাউন্সিলের আয়োজন করা হবে কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেটা সময়ই বলে দেবে। আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি (কাউন্সিলের) নিচ্ছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে, থানা, জেলা, কেন্দ্র সকল ক্ষেত্রে আমরা কাউন্সিলের মধ্যে দিয়ে সংগঠনকে সংগঠিত করব। ৩-৪ বা ৬ মাসের মধ্যেই আমরা কাউন্সিলের আয়োজন করব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর