ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকার গবেষণাকে গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপির শাসনামলে গবেষণার কিছুই ছিল না। গবেষণায় কোনো উৎসাহ দেওয়া হতো না। গবেষণার জন্য যে আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয়; সেটা তাদের মাথায়ই ছিল না।’
‘আমি ক্ষমতায় এসে সে সুযোগ করে দিই। আমি প্রথমেই গবেষণার জন্য একটা থোক বরাদ্দ সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিলাম। ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিলাম গবেষণার জন্য। এরপর ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখি গবেষণা এবং প্রযুক্তির জন্য। কেননা, আমি সব সময় গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিশেষ গবেষণা অনুদান এবং এনএসটি চেক বিতরণ করা হয়।
শেখ হসিনা বলেন, ‘যে ২৯ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না; সে সময়ের ক্ষমতাসীনরা দেশের কোনো উন্নয়নের চিহ্ন রাখতে পারেনি। তারা করবে না এটাই স্বাভাবিক। তারা তো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বরং বিরোধিতা করেছিল। যারা দেশের উন্নয়নই চায় না তারা উন্নয়ন করবে কী করে? ক্ষমতায় এলেই নিজের পকেট ভরতে ব্যস্ত হয়ে যায় বিএনপি। আর আজ দেশ দ্রুত উন্নয়নশীল।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকেই আমরা গবেষণা শুরু করেছি। আজ তার ফলে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছিলাম বলেই আজ অনেক ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা লাভ করতে পেরেছি। আমরা এখন গবেষণায় উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠাচ্ছি। যেটা স্বাধীনতার পর সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ এর পর সব বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
দেশের উন্নয়নে, দেশের শান্তিতে গবেষণার বিকল্প নেই মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গবেষণা করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে আমাদের তরুণদের। সবকিছুতেই সফলতা পেতে হলে অতীত জানা প্রয়োজন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন, তা সবারই জানা থাকা জরুরি। এমন গৌরব অতীত আমাদের চলার পথের অনুপ্রেরণা। এসব জানতে হলে গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুগ পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বটাই হচ্ছে পরিবর্তনশীল। তথ্যপ্রযুক্তির যুগ এখন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা কারো থেকে পিছিয়ে থাকবো না, এটাই হচ্ছে আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’
‘আমি এটা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশের মানুষ অনেক মেধাবী। তারা কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না এবং পিছিয়ে থাকবে না। কিন্তু সেই সুযোগটা আমাদের সৃষ্টি করে দিতে হবে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। সবার হাতে স্মার্টফোন। মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। মহাকাশ জয় করেছি। আরও অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটালে এগিয়ে নিচ্ছি দেশে। এছাড়া আমাদের মহাকাশেও গবেষণা প্রয়োজন। হয়তো আমরা মহাকাশেও যেতে পারবো। এসব বিবেচনা করে আমরা বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ চালু করেছি।’
বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর কোন কোন ক্ষেত্রে উৎকর্ষতার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করুন। গবেষণার জন্য টাকা কোনো সমস্যা নয়। কারণ অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে এখন আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী।’
এসময় প্রধানমন্ত্রী যারা গবেষণা করে অবদান রেখেছেন, যারা অনুদান পাচ্ছেন, তাদের অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতা যখন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সবকিছু মোকাবিলা করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমার পুরো পরিবারকে আমি হারাই। এসব আমাদের নতুন প্রজন্মের জানা দরকার। বোঝা দরকার, জাতির পিতা দেশের জন্য কী কী করে গেছেন। আমাদের যে স্বাধীনতার চেতনা-গৌরব, সে বিষয়েও গবেষণার বিকল্প নেই।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক।