সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নিতে অনেকটা মুখিয়ে আছেন বিএনপি থেকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচিত কয়েকজন প্রতিনিধি। ঘরোয়া বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। শপথের পক্ষে শীর্ষ নেতৃত্বের উপর চাপ সৃষ্টিতে উঠেপড়ে লাগলেও, শীর্ষ নেতৃত্বও অনড় রয়েছে তাদের সিদ্ধান্তে।
নির্বাচিতরা মনে করছেন, সংসদে গেলে তারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়েও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবেন। যা সরকারি দল থেকেও বলা হয়ে আসছে। এখন অপেক্ষা দল থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের। তাদের প্রত্যাশা, শেষ সময়ে হয়তো শপথের পক্ষেই অবস্থান নিবে বিএনপি।
দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত শপথের বিপক্ষে। শপথ নিয়ে সংসদে গেলে এই সরকারের বিতর্কিত নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া হবে। কেননা নির্বাচনের আগের রাতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। এছাড়া তারা যে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছিল, সংসদে গেলে তারও কোনো মূল্য থাকবে না।
ফলে শপথ নেয়া বা না নেয়া উভয়দিক থেকে চাপে রয়েছে দলটির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। নির্বাচিতরা বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, তাদের নির্বাচনী এলাকার ভোটার এমনকি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা শপথের পক্ষে। আবার দল যেহেতু মনোনীত করেছেন সেক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করাও সম্ভবপর নয়। ফলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হচ্ছে তাদের।
নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যাতে শপথে না যান এজন্য তাদেরকে নানাভাবে বোঝাচ্ছে দল, যার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকের পরই হয়তো নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করবেন তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২২ এপ্রিল সিনিয়র নেতারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। স্কাইপিতে লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যুক্ত হন এই বৈঠকে। দলের সিনিয়র নেতারা তারেক রহমানের কাছে শপথের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তারেক রহমানও নেতাদের মত জানতে চান। এ সময় সিনিয়র নেতারা সংসদে যোগ না দেওয়ার পক্ষে জোরালো মত দেন। এক পর্যায়ে তারেক রহমানও শপথ না নেয়ার পক্ষে সম্মত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচিতরা যদি সংসদে গিয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে তাহলে অন্তত ৬ টি আসনে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি হবে। সেই এলাকায় নেতাকর্মীরা হামলা মামলা থেকে রেহায় পাবে। সংসদে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে পারলে বড় আন্দোলনও গড়ে তোলা সম্ভব। সংসদের ভেতরে-বাইরে তারা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শপথের সময়সীমা আরও ছয় দিন বাকি আছে। শেষ মুহূর্তে শপথ নিতেও পারে। যেহেতু তাদের বিকল্প কোন পথ নেই। শপথ নেয়ার পরেও যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয় সেক্ষেত্রে তারা শপথ নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশনে যোগ দিয়ে ৯০ দিনের জন্য সংসদ বর্জন করতে পারে। যেহেতু শপথের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি জড়িত। তবে সবকিছুর শেষ দেখতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।’
দলের নির্বাচিত এক প্রতিনিধি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগামীকাল দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ে আমাকে ডেকেছেন। সবাইকে ডেকেছেন কিনা আমি জানি না। দেখি ওখানে কি সিদ্ধান্ত দেন। ওখান থেকে ফিরে আমার ব্যক্তিগত মতামত জানাবো। তার আগে দেখি দল ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয় কিনা।’
এ বিষয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, শপথ নেয়া মানে সরকারের ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া। আমরা এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে টোকেন মামলা করেছি। সেখানে সংসদে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দলের সিদ্ধান্ত কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি শপথ নেবে না। যেটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও সিদ্ধান্ত। যদি কেউ শপথ নেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’