যেভাবে মুক্তি পেতে পারেন খালেদা জিয়া

বিএনপি, রাজনীতি

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 21:33:52

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গত ১৫ মাস ধরে কারাবন্দী আছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় ৩৭টি মামলা। এর মধ্যে চারটি বাদে সব মামলায় জামিন মিলেছে তার। জামিন পাননি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং মানহানির দুইটি মামলায়।

রাজনীতির মাঠে প্রায় সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে, খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন। তার আইনজীবীরা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব, কিন্ত সেখানে সরকারের সদিচ্ছা বা মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা থাকতে হবে।

কারণ হিসেবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মনে করছেন, সরকার আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করে। জামিন আবেদনের পর সরকারপক্ষ তাতে বাধা দেয়। এতে মুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তার আইনজীবীরা যখন আদালতের কাছে জামিন চাইবেন, তখন যদি অ্যাটর্নি জেনারেল বা সরকার পক্ষ বাধা না দেয়, তাহলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব মামলায় জামিন পেলেও এখন দুইটি মানহানির মামলা ও দুইটি দুর্নীতির মামলায় জামিন পাননি। মানহানির মামলায় যেকোনো সময় জামিন পাবেন খালেদা জিয়া। তাই মূলত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেতে হবে, তাহলেই তার মুক্তি মিলবে।

এদিকে গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দেওয়া সাত বছরের সাজা বাতিল ও খালাস চেয়ে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। এজন্য এই মামলায় দেওয়া অর্থদণ্ড ও সম্পত্তি জব্দের আদেশের স্থগিত করেছেন আদালত। একই সঙ্গে দুই মাসের সময় দিয়ে এই মামলার নথি তলব করেছে হাইকোর্ট। আইনজীবীদের প্রত্যাশা, তারা আগামী সাত দিনের মধ্যেই মামলায় নথি পেয়ে যাবেন। নথি পেলেই মামলায় বেইল বা জামিনের আবেদন করা হবে। অপর দিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জামিন পাওয়ার পর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

বিএনপি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার মুক্তি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাবের উপর। এ বিষয়ে সোমবার (৬ মে) এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে গিয়ে বলেছেন- তারেক রহমানকে বাড়াবাড়ি করতে মানা করবে। নাহলে ওর মাকে আজীবনের জন্য জেলে রাখব। তাহলে আইন ও আদালতের কারণে নয়, শেখ হাসিনার ইচ্ছায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে থাকতে হবে। আমি বিচারপতিদের প্রতি নিবেদন করব, একজন কারাবন্দীকে আজীবন কারাগারে থাকতে হবে, এমন হুমকি যখন প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে দেন, তাকে কি একটু আদালতে এনে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার আপনি কে?'

রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন রয়েছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ীরা সংসদে যাওয়ার বিনিময়ে সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা হয়েছে। আর তা হলো- বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদে যাবেন, আর অপর দিকে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে সরকার। এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়, এটা বলছি না। কিন্তু তার মুক্তিতে সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি সম্ভব নয়। আমরা একটা মামলায় জামিন নেব, সরকার আরেকটা করবে। হাইকোর্ট জামিন দেবে, সরকার আপিল বিভাগে যাবে তা তুলতে। এভাবে সরকার তার কারা জীবনটাকে দীর্ঘায়িত করে, জামিন যেন না পায় সে প্রচেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টা যদি না করে, তাহলেই তিনি জামিনে মুক্তি পেতে পারেন।’

তিনি বলেন, 'আমরা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আপিল করেছি। সেখানে দুই মাসের সময় দিয়ে নথি তলব করেছে। এটাতে সাত বছরের সাজা, বিশেষ করে একজন বয়স্ক মানুষ। এই সময়টা নাও দিলে পারতেন। কিন্তু সেখানেও অ্যাটর্নি জেনারেল (মাহবুবে আলম) উপস্থিত হয়ে গেলেন। এই নথি আমরা সাত দিনের মধ্যেই আনতে পারতাম। এখন আমাদের ভয় হচ্ছে যে, হাইকোর্ট যদি বেইলও দেয়, সরকার আবারও আপিলে যাবে। সেখানে সময় ক্ষেপণ হবে। এভাবে যদি সরকার সময়ক্ষেপণ না করে তাহলে জামিনেই তার (খালেদা জিয়া) মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অপর দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আমরা আইনগতভাবে লড়াই করছি। আমরা বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তাকে অনুরোধ করেছি, আদেশ দ্রুত দেওয়ার জন্য। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আমরা রেকর্ড কনফার্ম করেছি। রেকর্ডটা (নথি) এলে বেইল পিটিশন মুভ (জামিনের আবেদন) করব। এর জন্য দুই মাসের সময় দিয়েছেন আদালত।’

‘আমরা চেষ্টা করব, এক সাপ্তাহের মধ্যে নথি নিয়ে আসার জন্য। এরপর আদালতে শুনানি হবে। আর জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলা অ্যাপিলেট ডিভিশনে পেন্ডিং আছে। ওটা পরে আমরা মুভ করব। এরপর আপিল হবে, তারপর লিভ পিটিশনের জন্য আমরা শুনানি করব। তারপর বেইলের আবেদন। এই দুইটি মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেলেই মুক্ত হতে পারবেন। আর মানহানির দুইটি মামলায় জামিন নেওয়া হয়নি, সেগুলো তেমন কোনো বিষয় নয়, জামিন হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন: সিদ্ধান্তহীনতার চেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ভালো: গয়েশ্বর

আরও পড়ুন: জামিনে মুক্ত শিমুল বিশ্বাস

এ সম্পর্কিত আরও খবর