বগুড়া-৬ আসনে উপ-নির্বাচনে বিএনপি নিশ্চুপ

বিএনপি, রাজনীতি

গনেশ দাস,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া | 2023-08-31 20:14:51

বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপ-নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা সোচ্চার হলেও বিএনপি একেবারেই নিশ্চুপ। তবে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা কল্পনা জল্পনা।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। শূন্য ঘোষণার পর দিন থেকেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নিজেকে প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির নেতারা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন প্রার্থী হতে। কিন্তু বিএনপি থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নেতাই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেননি।

একারণে সাধারণ কর্মী-সমর্থক এবং ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। তবে বিএনপির অধিকাংশ নেতারা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি করছেন। আবার অনেকেই বলছেন বগুড়া-৬ আসন থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচন করে থাকেন। উপ-নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে না পারলেও জিয়া পরিবার থেকেই প্রার্থী দাবি করেছেন তারা।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ২৯ এপ্রিল বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ শপথ নিলেও মির্জা ফখরুল শেষ পর্যন্ত শপথ নেননি। এ কারণে গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

গত ৮ মে বগুড়া জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম শাহ্ এই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৩ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ, ২৭ মে মনোনয়নপত্র বাছাই, ৩ জুন প্রার্থীতা প্রত্যাহার এবং ২৪ জুন সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে।

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ার ৭টি আসনই দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দখলেই ছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে বগুড়া-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করায় মহাজোটের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ওমর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমরকে পরাজিত করে বিএনপি মহাসচিব  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তথা মহাজোট থেকে নির্বাচিত অন্য প্রার্থীরা শপথ নিলেও বিএনপি মহাসচিব শপথ নেননি। একারণে শূন্য হওয়া এই আসনে বিএনপি থেকে কে নির্বাচনে অংশ নেবেন তা জেলা বা তৃণমূল নেতাদের কাছে স্পষ্ট নয়।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি বগুড়ায়। একারণে বগুড়ার অধিকাংশ নেতা-কর্মীরই জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যকে এই আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা ধারণা করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শেষ পর্যন্ত শপথ নিলেও দলের মহাসচিব শপথ না নেয়াটা দলের কৌশল হতে পারে। দলের নেতা-কর্মীদের মতে উপনির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে। এরমধ্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিও পেতে পারেন। অথবা জিয়া পরিবার থেকেই কেউ নির্বাচনে অংশ নেবেন জন্যই মহাসচিব শপথ না নিয়ে আসন শূন্য করেছেন।

তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, বিএনপি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ নাও করতে পারে। আর বিএনপি অংশ গ্রহণ না করলে এই আসনটি উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের দখলে চলে যাবে। একারণে আওয়ামী লীগ থেকে বেশ কয়েকজন নেতা প্রার্থী হতে আগ্রহী মর্মে প্রচার শুরু করেছেন।
জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর একাদশ সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরেও আবারো উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হবেন মর্মে প্রচার শুরু করছেন।

এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতাই উপ-নির্বাচন নিয়ে মুখ খুলছেন না। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ভিপি সাইফুল ইসলাম বার্তা ২৪.কমকে বলেন, উপনির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। দল যে নির্দেশনা দেবে নেতা-কর্মীরা তা বাস্তবায়ন করবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ঠাকুরগাও ও বগুড়া থেকে নির্বাচন করেন। বগুড়া-৬ আসনে তিনি নির্বাচিত হন। বিএনপি এই নির্বাচনে ৬টি আসনে জয়ী হয়। ইতোমধ্যে ৫ জন সাংসদ দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন।

সংবিধান অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্যে নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে নব্বই দিনের মধ্যে শপথ নিতে না পারলে ওই সাংসদের আসন শূন্য হবে। তবে এই ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে স্পিকার যথার্থ কারণে তা বাড়াতে পারবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর