প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আ'লীগের সঙ্গে ভিন্নমত শরিকদের

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 17:26:37

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে তাদের রাজনৈতিক জোটসঙ্গী তথা শরিক দলগুলোর।

এত বিশাল আকারের বাজেট কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটা নিয়ে যেমন মহাজোট শরিকদের মধ্যে 'সংশয়' রয়েছে, ঠিক তেমনি এই বাজেটে আদৌ দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে কি না সেটা নিয়েও তারা সন্দিহান।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বৃদ্ধি সহায়ক’ হিসেবেও দেখছে কোনো কোনো শরিক দল।

১৪ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের মতো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খাতে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম বেড়েছে বলে মনে করেন অনেক জোটসঙ্গী। সেই সঙ্গে করের বোঝা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের নাভিশ্বাস তুলে দিতে পারে।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সরকারি জোট ও বিরোধী দলে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকলেও ১৪ দলের শরিক কয়েকটি দল এখনো নিশ্চুপ। বাজেট প্রস্তাবের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও জোটের শরিক কয়েকটি দল বাজেটের বিষয়ে দলগত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। শরিক দলের নেতারা দলীয় অনুষ্ঠানে বাজেট সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। কেউ কেউ ঘরোয়া আলোচনায় কথা বলছেন।

বাজেট প্রস্তাবনার পরপরই ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি বরাবরের মতো এবারও ‘বাজেট জনবান্ধব নয়’ বলে দাবি করলেও আওয়ামী লীগ মনে করে, বাজেট নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে দলটি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত, ভারসাম্যমূলক, গণকল্যাণমুখী, যুগোপযোগী ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।'

এদিকে মহাজোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি মনে করে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন ‘কঠিন’ হবে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'জাতীয় পার্টি চায়, অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্নদের কাছ থেকে বেশি হারে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা হোক। আর স্বল্প আয়ের মানুষের ঘাড়ে দায় কম চাপানো হোক।'

১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির দৃষ্টিতে বাজেটে বৈষম্য থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। বাজেটের কিছু দিকের সমালোচনা করে দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সমৃদ্ধির পথ চলায় বৈষম্যের যে সিন্দাবাদের দৈত্য জাতির ঘাড়ে চেপে বসে আছে, এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় বাজেটে নেই। বরং, মধ্যবিত্তকে চাপে রেখে ধনীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। পোশাকশিল্পের মালিকদের জন্য প্রণোদনা বাড়লেও পোশাকশিল্প শ্রমিকরা সেই অন্ধকারেই রইলেন। আর যে কৃষক ধানসহ তার উৎপাদিত ফসলের দাম না পেয়ে জেরবার অবস্থায়, তাদের পণ্যমূল্য সহায়তারও কোনো ব্যবস্থা নেই বাজেটে। দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির পেছনে যারা মূল শক্তি, সেই কৃষক, শ্রমিক, নারী উদ্যোক্তারা অবহেলিতই রয়ে গেছেন এ বাজেটে।’

তার মতে, ‘গত কয়েক বছর ধরে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও বাজেটে অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য কমছে না। শুধু আয় বৈষম্যই নয়, আঞ্চলিক বৈষম্য ও গ্রাম-শহরের বৈষম্য অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট করছে। নিজেদের শ্রমশক্তির উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে শুধু ট্যাক্স ও রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করে নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় সরকার পৌঁছাতে পারবে না।’

বাজেটে বৈষম্য বৃদ্ধিকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দলের আরেক শরিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাজেটে বৈষম্য কমার বদলে বছর বছর বাড়ছে। বৈষম্য কমিয়ে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।’

এদিকে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্ব দিতে চান জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি মনে করেন, পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে বিরাট অঙ্কের ঋণ নেওয়া হলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভ্যাটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অংশ আদায় হবে কী না, এ বিষয়ে সংশয় রয়েছে তার।

বাজেট বাস্তবায়নে শরিকদের সংশয়কে অমূলক মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা। বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বার্তা২৪.কমের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়ন সব সময় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করেছি। শেখ হাসিনার সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা নতুন স্পিরিট নিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এরপরই বাজেট নিয়ে নানা মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর