গৌরবময় ৭১ বছরে পা রাখল আ.লীগ

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 19:39:05

আজ ২৩ জুন (রোববার) ৭১ বছরে পদার্পণ করল দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলটির এই দীর্ঘ পথযাত্রা সহজতর ছিল না। এই দীর্ঘ সময়ে দলটিকে বহু বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে ।

তবে বহু বাধা-বিপত্তির মাঝেও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলটি বাঙালি জাতির জীবনে এনে দিয়েছিল মুক্তির স্বাদ ও স্বাধীনতা।

দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল ছিল ভাষা আন্দোলনের দাবিতে। পশ্চিমা সরকার বাঙালিদের মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দেয়।

আর বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৪৯ সালে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্ম হয় নতুন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের। তখন আওয়ামী লীগের নাম ছিল মুসলিম লীগ।

এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক হন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পরে ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর পরের বছর দলের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে শেখ মুজিব ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলটি স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, ৬২ ও ৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন ও ৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলে।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

কিন্তু স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রাম যখন করছিলেন দলের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, সেই মহূর্তে জাতীয় জীবনে নেমে আসে সামরিক জান্তার কালো থাবা।

স্বাধীনতার পর পঁচাত্তরে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ওই বছর তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। সে সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরে আওয়ামী লীগের দলের ওপর অন্ধকার নেমে এসেছিল। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। তিনি নিদারুণ কষ্ট বুকে নিয়ে এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে হাল ধরেন।

তবে দেশে ফিরে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে শেখ হাসিনা সফল নেতৃত্ব দিলেও দলটিকে সরকার গঠন করতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হয়।

সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে।

এ সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করলেও ২০০১ সালে আবারো দেশ চলে যায় বিএনপি-জামায়াতের হাতে। বিএনপি-জামায়াতের সময় দলটির নেতাকর্মীরা আবারো নিদারুণ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় সমাবেশের মধ্যে গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। সেই দিনে গ্রেনেড হামলায় বেঁচে ফিরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতায় আসে দলটি। সেই থেকে টানা তিনবার সরকার পরিচালনায় থেকে দেশকে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, ৮১-তে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনার একটাই প্রতিশ্রুতি, স্বপ্ন ছিল। তা হলো তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলেন। সেই হাসি ফোটার লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন:দেশ অর্জন থেকে বিনির্মাণের সাত দশক

এ সম্পর্কিত আরও খবর