খালেদার চিকিৎসার ফাইল নিয়ে মিথ্যাচার করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

, রাজনীতি

Admin | 2023-09-01 06:06:26

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আটকে থাকার কথা বলে বিএনপি মিথ্যাচার করেছে।

বিএনপির অভিযোগ তোলার পরদিন রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে বক্তৃতায় একথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার বলেছিলেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের সুপারিশ করেছেন চিকিৎসকরা, সেই ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অনুমোদনের জন্য আটকে আছে বলে তারা খবর পেয়েছেন।

মন্ত্রী কাদের বলেন, “বেগম জিয়া অসুস্থ হলে জেল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আছে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কাগজপত্র কেন যাবে?

“তারা (বিএনপি) মিথ্যার উপর ভর করে রাজনীতি করে, সব জায়গায় মিথ্যাচার করে। এমন একটা ভাব যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাগজ গেছে, তিনি সই করলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়ে যাবে। তাতে কি বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে যাবেন?”

সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগও উড়িয়ে দেন কাদের; পাশাপাশি বিএনপির চিকিৎসকদের বক্তব্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

“জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকরা যখন চিকিৎসার সার্টিফিকেট দেবেন, সেখানে তো সন্দেহ থাকাটা স্বাভাবিক। এই চিকিৎসক চিকিৎসার প্রকৃত চিত্রটা না বলে রাজনৈতিকভাবে একটা রাজনৈতিক সার্টিফিকেট দিয়ে দিবে, এটা কি গ্রহণযোগ্য?

“সত্যিকারের যে চিত্র, এই ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। সরকারের অমানবিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর শেখ হাসিনার সরকার অমানবিক সরকার নয়। তারা আমাদের সাথে যে ব্যবহার করেছেন, তার পাল্টা ব্যবহার কিন্তু আমরা করিনি।”

খালেদার মুক্তির দাবি সরকারকে জানিয়ে কোনো লাভ নেই বলে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

“খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন আদালতের বদৌলতে। সেটা নিয়েও তারা রাজনীতি করছেন। যেন সরকারই খালেদা জিয়াকে দণ্ড দিয়েছে। আমরা তাকে দণ্ডও দিইনি, আমরা তাকে দণ্ড থেকে মুক্তিও দিতে পারব না।

এসময় তিনি আরো বলেন,“আমি চাই ত্যাগী, যোগ্য নেতৃত্ব। কারও পকেটের কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব হবে না। কোন সিন্ডিকেট দ্বারা ছাত্রলীগ চলবে না। ছাত্রলীগ চলবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার নির্দেশনায়। এর বাইরে কোন ভাবনা চিন্তা করার অবকাশ নেই।”

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, “টাকা-পয়সার কর্মীরা থাকবে না, আদর্শের কর্মীরা থাকবে। জবরদস্তি করে অযোগ্যকে নেতা বানাবেন, দুঃসময় এলে হাজার পাওয়ারের বাতি দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

“অনুপ্রবেশকারী পরগাছা যেন পার্টির নেতৃত্বে আর না আসতে পারে। পরগাছাদের জন্য ছাত্রলীগ কোনো সুযোগ দিবে না। সোহাগ-জাকিরকে বলব, তোমরা ভালো কিছু করে যাও।”

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে নেতৃত্বে আসতে হবে।

তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ হল রাজনীতির পাঠশালা। এই রাজনীতির সিলেবাস তিনটি। সিলেবাস তিনটি হল, ১. অসমাপ্ত আত্মজীবন ২. কারাগারের রোজনামচা ৩. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনী।”

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, “ছাত্রলীগকে যদি দেহের সাথে তুলনা করা হয়, তবে ঢাবি ছাত্রলীগ হবে সেই দেহের আত্মা।

“এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের উচিৎ হবে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করে, যারা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে চায়, যারা বাংলাদেশকে নিয়ে আবার ১/১১ এর স্বপ্ন দেখে, তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তোলা।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, “বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, রাজনীতি মানুষের জন্য। জাতির পিতার এই আদর্শকে ধারণ করে আমরা নেতৃত্বে আসার পর ‘পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতি, রাজনীতির পাশাপাশি পড়াশোনা নয়’ তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি।”

বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তাতে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সমর্থন চান।

তিনি বলেন, “আজকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা অনেক বেড়ে গেছে। বহিরাগতদের আনাগোনা বিভিন্ন সময় বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং কোর্সের মাধ্যমে বহিরাগত বাড়ছে। অবিলম্বে এই ইভিনিং কোর্স বন্ধ করতে হবে, বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।”

বক্তব্যের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম।

অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিদ-প্রিন্স নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর