ফটোসেশনেই চলছে আ.লীগের মশা নিধন অভিযান

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 03:46:44

ডেঙ্গুর প্রকোপে রাজধানী বাসী পর্যুদস্ত। কোন কারণে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছে মানুষজন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও আসছে হরহামেশাই। সেই খবর জনমনে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ঈদ মৌসুমে ডেঙ্গু ভয়াবহতা রাজধানী ছাড়িয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মোকাবেলায় তৎপর সরকার ও প্রশাসন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর এই তৎপরতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে— ডেঙ্গু মোকাবেলায় মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তৎপরতা পরিণত হয়েছে মহড়ায়। রাজধানীতে কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচি দিলে সেখানে জমায়েত হয়ে বক্তৃতা ও প্রতীকী আকারে মশা নিধনে স্প্রে করে বিদায় নিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। এরপর কর্মসূচি কতটুকু বাস্তবায়ন হলো সেই খোঁজও নেই কারও কাছে। ফটোসেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের মশা নিধন অভিযান। নামকাওয়াস্তে অভিযান কর্মসূচি পালন নিয়ে বিরক্ত দলের হাইকমান্ড।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, পরিষ্কার রাখি চারপাশের পরিবেশ, পরিচ্ছন্ন সমাজ-ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ’— এই স্লোগানে বুধবার (৩০ জুলাই) ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকাসহ সারা দেশে তিন দিনব্যাপী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামে ক্ষমতাসীনরা। অথচ তিন দিনব্যাপী এ অভিযান কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হয় নগরীর চারটি স্থানে।

উদ্বোধনী দিনে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা তাতে অংশ নেন। ধানমন্ডি খালের আশেপাশ তারা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেন, ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করে মশা মারার ওষুধ ছিটান। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই অভিযান শেষ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় নেতারা চলে যাওয়ার পর অন্যান্য নেতা-কর্মীরাও তাদের পিছে পিছে লাপাত্তা হয়ে যান।

একই চিত্র গুলিস্তান, ফার্মগেট, শান্তিনগর ও মিরপুর মাজার রোড এলাকায় পরিচালিত অভিযানেও। এসব এলাকার কর্মসূচিতে সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় নেতারা আসার আগে কর্মসূচি পালনের স্থানে বেশ কিছু ফগার মেশিন, ঝাড়ু সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও নেতারা আসার আগে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা আসার আগেই স্লোগান ও মহড়া নিয়ে উপস্থিত হতে থাকেন বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের কর্মীরা। নেতারা উপস্থিত হলে শুরু হয় কর্মীদের ফটোসেশন। কর্মসূচির উদ্বোধনের পর কেন্দ্রীয় নেতাদের বিদায় তো অভিযানও শেষ।

এসব স্থানে কর্মসূচি দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উদ্বোধন করলেও তিনি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যাও কমতে থাকে।

যতক্ষণ কেন্দ্রীয় নেতারা মশা নিধন কর্মসূচিতে থাকনে  ততক্ষণ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত থাকেন। নেতা চলে যাওয়ার পর কর্মীদের আর দেখা পাওয়া যায় না। যতক্ষণ কর্মসূচিতে থাকেন ততক্ষণই ফেসবুকে ছবির ঝড় তুলতে থাকেন তারা। শুকনো রাস্তায় ঝাড়ু হাতে দাঁড়ানো, কিংবা ফগার স্প্রে দিয়ে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি তুলে ফটোসেশন করেন নেতা-কর্মীরা!

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান রাজধানীর ৪/৫টি থানা ও ৯/১০টি ওয়ার্ডে নামকাওয়াস্তে পালিত হয়েছে। বেশিরভাগ এলাকাতেই দলীয় নেতা-কর্মীদের তেমন একটা দেখা যায়নি। এসব কর্মসূচি পরিচালনায়ও ছিল সমন্বয়হীনতা। নগরীতে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত অধিকাংশ সংসদ সদস্যও ছিলেন নিষ্ক্রিয়।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে অভিযান মনিটরিং করছেন লন্ডনে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেতা-কর্মীদের ফটোসেশনের এসব ছবি ও সমন্বয়হীনতায় ভীষণ বিরক্ত তিনি। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে কঠোর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। এরপর টনক নড়ে নেতাদের।

ডেঙ্গু মোকাবেলায় মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিশেষ যৌথসভা করে আওয়ামী লীগ। সভায় উপস্থিত থাকেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সব সদস্য, থানা এবং ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দলীয় সংসদ সদস্য ও কাউন্সিলররা। আধা ঘণ্টাতে শেষ হয় জরুরি ওই সভা।

নামকাওয়াস্তে কর্মসূচি পালন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা নামকাওয়াস্তে কর্মসূচি পালন করলাম, বেশিরভাগ ওয়ার্ডে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা হলো না, কর্মসূচি পালন হলো না। এই দায়সারা কর্মসূচির কোন প্রয়োজন নেই। এতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রও বন্ধ হবে না, এডিস মশার উৎসমূল বন্ধ করতে পারব না। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ফটোসেশন করার জন্য এই অভিযান নয়।

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মশক নিধন অভিযানে নামলেও মাঠে নেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটের মাঠে তাদের সক্রিয়তা সবার দৃষ্টিগোচর হলেও মানুষের দুঃসময়ে তারা ঘরেই আটকে আছেন। কেউ কেউ প্রেস কনফারেন্সে ও সমাবেশে বক্তৃতা দিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারকে নসিহত করছেন। কিন্তু কাজের বেলায় ঠন ঠন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্ষমতাসীনদের একযোগে কাজের আহ্বানেও তাদের সাড়া মেলেনি। সাধারণ মানুষের প্রতি রাজনৈতিক এ দলগুলোর নিবেদন নিয়েও তাই প্রশ্ন আছে নাগরিকদের মনে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর