রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা দিলেন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানের নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তিনি।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরো বলেন, ‘জিএম কাদের পার্টির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন। যে প্রক্রিয়ায় তিনি নিজেকে পার্টির চেয়ারম্যান দাবি করছেন, সে প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। এরশাদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণে আমরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি।’
জিএম কাদের পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠনে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন। গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে বলা আছে, চেয়ারম্যান, মহাসচিবের বাইরে পার্লামেন্টারি বোর্ডে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সাত সদস্য থাকবেন। তিনি যা করেছেন, সবই অবৈধ। এতে পার্টি ভাঙবে না বলেও মন্তব্য করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা জানেন, জিএম কাদেরকে ব্যর্থতার কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পার্টিকে বিভক্ত করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এটা কিন্তু আমার কথা না। এরশাদ সাহেব যে চিঠি দিয়েছিলেন, তার ভাষ্য এমন ছিল। সংবাদ মাধ্যম থেকে জেনেছি। আবার তাকে যেদিন পুনর্বহাল করা হয়, সেদিন রাত ১১টায় ব্রিফ করা হয়। কী এমন জরুরি ছিল যে মধ্যরাতে ব্রিফ করতে হলো?’
‘সেই রাতে অসুস্থ এরশাদের বাসার নিয়ন্ত্রণ কাদেদের হাতে ছিল। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দু'জন নেতা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন,’ যোগ করেন তিনি।
এতোদিন পরে এরশাদের চিঠি নিয়ে প্রশ্ন কেন জানতে চাইলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এরশাদের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন থাকায় সব জেনেও চুপ থেকেছি।’
এরশাদের জানাজায় জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘শোকের অনুষ্ঠানে এমনটা কেউ করতে পারে? আমরা কিছু বলিনি, চল্লিশার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান নন। তিনি জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সম্পর্কে গঠনতন্ত্র বলছে, প্রেসিডিয়ামের সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিতে তিনি কাজ করবেন। তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যে কারনে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আজ থেকে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। জিএম কাদের যেসব কমিটি দিয়েছেন, সাংগঠনিক দল গঠন করেছেন, সব অবৈধ।’
সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সোহেল রানা, সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, সংসদ সদস্য মজিবুল হক চুন্নু, সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান, সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ ও সফিকুল ইসলাম সেন্টু।
ভেতরে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে বাইরে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী স্লোগানে মুখর করে রাখেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদের আগে বিরোধী দলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, ‘পার্টিতে কী হচ্ছে? জাতীয় পার্টি কী আবার ভাঙতে যাচ্ছে? অতীতে কিন্তু জাপা ভেঙেছে। আসুন সবাই মিলে পার্টিটাকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করি।’
রওশন এরশাদ আরো বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টিকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন, সবাইকে মিলে দল চালানোর জন্য। যারা অতীতে চলে গেছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করব, অভিমান ভুলে ফিরে আসুন। যুবকদের প্রতি অনুরোধ করব, তোমরাও এসে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী কর। আমরা একসঙ্গে মিলে মিশে কাজ করলে দল শক্তিশালী হবে।’