রাতের আঁধারে শেষ বিদায় শোভন-রাব্বানির!

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 07:22:53

এক বছর এক মাস ১৪ দিন তথা ৪০৯ দিন। মাত্র ৪০৯ দিন দায়িত্ব পালন করে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে হলো যথাক্রমে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে।

দুই বছরের দায়িত্ব দিয়ে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই তাদের হাতে ছাত্রলীগের দায়িত্বভার তুলে দিয়েছিলেন সাংগঠনিক অভিভাবক, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নাটকীয়ভাবে সরে দাঁড়াতে হলো শোভন-রাব্বানীকে। এ কেলেঙ্কারি কেড়ে নিয়েছে তাদের যৎসামান্য ‘কৃতিত্ব’ও। হঠাৎ ক্ষমতা হারিয়ে একা হয়ে পড়েছেন তারা। এতদিনের ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ চাটুকাররাও যেন উধাও। গাড়িতে নিয়ে যাদের ঘুরে বেড়াতেন, তাদেরও কারো দেখা নেই। অন্য দিকে পাশে থাকার ভরসা দিয়ে আওয়ামী লীগের যে নেতারা এতদিন আশ্বাস দিয়ে এসেছিলেন, তারাও কেন জানি নিশ্চুপ! শোভন-রাব্বানীকে রাতের আঁধারে বিমর্ষ মুখে বিদায় নিতে হলো।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের ৭২ বছরের ইতিহাসে মেয়াদপূর্তির আগে একসঙ্গে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ কিংবা অপসারণের ঘটনা এবারই প্রথম।

তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শোভন-রাব্বানীর পথচলা এখন অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়ল। নেত্রীর সুনজর থেকে তারা সরে গেছেন। অথচ অনেক প্রত্যাশা ও স্বপ্ন নিয়েই নেত্রী তাদের দু’জনের হাতে ছাত্রলীগের নেতেৃত্বের ভার তুলে দিয়েছিলেন।

শোভন-রাব্বনীর ক্ষমতার চেয়ার টালমাটাল হয় ৮ সেপ্টেম্বর রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায়। সে রাতে দু'জনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও তখন বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন। একপর্যায়ে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ হওয়ার খবর বেরিয়ে আসার পর থেকেই ছাত্রলীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় শোভন-রাব্বানীর কর্মী সমর্থকরা যেমন স্লোগানে, মিছিল মিটিং করে তাদের প্রতি সমর্থন জুগিয়ে আসছিলেন, তেমনি আরেকটি পক্ষ কমিটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনায় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে।

আরো পড়ুন: ছাত্রলীগের পদ হারালেন শোভন-রাব্বানী

এমন দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে শোভন-রাব্বানীর ভাগ্য নির্ধারণ হয় শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। গণভবনে অনুষ্ঠিত সে সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সভা সূত্রে জানা যায়, কার্যনির্বাহী সংসদের পুরো বৈঠকে আওয়ামী লীগের কোনও নেতাই ছাত্রলীগের প্রসঙ্গটি তোলেননি। এজেন্ডা ভিত্তিক নানা বিষয় আলোচনার পর একদম শেষের দিকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আর কারও কিছু বলার আছে কিনা?’ তখনও সবাই চুপ করে থাকলে শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রলীগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

sHOVON
রাতে ক্যাম্পাস থেকে বের হচ্ছেন শোভন, ছবি: সংগৃহীত

 

বৈঠকে ছাত্রলীগের দুই নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সর্বশেষ তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটের পার্সেন্টেজ চাইতে গিয়েছিল। ভিসি তাতে রাজি না হওয়ায় উল্টো তাকেই দোষারোপ করার চেষ্টা করেছে। তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছে। এরা (শোভন-রাব্বানী) আসলে মনস্টার হয়ে গেছে। এদের আর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকার দরকার নেই।’

শোভন-রাব্বানীকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর তৃণমূলে পৌঁছালে বিশাল একটি গোষ্ঠী যেমন আনন্দ ও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, ঠিক তেমনি শোভন-রাব্বানীর কিছু কর্মী-সমর্থক মুষড়ে পড়েন। এছাড়া রাজনীতির স্বার্থে অনেকেই শোভন-রাব্বানীর সঙ্গ ত্যাগ করে নতুন নেতা জয়-লেখকের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়েন।

এদিকে গণভবনে যখন শোভন-রাব্বানীর ভাগ্য নির্ধারণ চলছিল, তখন তারা নিজেদের বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। এরপর কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার খবর নিশ্চিত হলে দু’জনেই অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন।

আরো পড়ুন: ছাত্রলীগের দায়িত্বে নাহিয়ান-লেখক

জানা গেছে, সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে শোভন-রাব্বানীর বাসায় যান। তাদের সঙ্গে আরো যুক্ত হন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের জোবায়ের আহমেদ। তারা কয়েকজন মিলে হাতিরঝিলে যান। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে একসঙ্গে ছবি তোলেন।

এরপর রাব্বানী ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানে মুষ্টিমেয় কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে দেখা করে তাদের থেকে বিদায় নেন।

রাত ১টায় জয়কে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাস চত্বরের সামনে আসেন শোভন। তখন শোভনের কর্মীরাই জয়ের নাম ধরে স্লোগান দিয়ে নতুন সভাপতিকে স্বাগত জানান। একপর্যায়ে জয় কর্মীদের শান্ত করলে সবাইকে ভালো থাকার শুভকামনা জানিয়ে রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নেন শোভন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর