টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর থেকেই জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নেওয়ার ৯ মাসের মধ্যেই জঙ্গিবাদ দমনে সফলতা অর্জন করে তার সরকার।
দেশকে জঙ্গিমুক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার লক্ষ্য এখন দুর্নীতি নির্মূল করা। সেজন্য নিজ দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে চান তিনি।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূল দলে শৃঙ্খলা ফেরানো, সংগঠনকে গতিশীল করা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ, মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করে ধারাবাহিক শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে। দলীয় সভাপতি এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান করছেন।
প্রায়ই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আদর্শ ধারণ ও সাদামাটা জীবন যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পড়ার টেবিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াতে ছাত্রলীগের নেতাদের সচেষ্ট থাকতে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
কিন্তু তার এই নির্দেশগুলোতে কর্ণপাত করেননি ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করেই বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে তারা যুক্ত হয়ে পড়েন। তাদের কর্মকাণ্ডকে ‘মনস্টার’র (দৈত্য) সঙ্গে তুলনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৮৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগসহ একাধিক অপকর্মে যুক্ত থাকায় শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে শীর্ষ দুই নেতা শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
যা ছাত্রলীগের ৭২ বছরের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। মেয়াদপূর্তির আগে একসঙ্গে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ কিংবা অপসারণের নজির কেউ মনেও করতে পারছেন না।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নেত্রীর এমন কঠোর সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে তিনি কাউকে প্রশ্রয় দেবেন না। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতে হবে—এই বার্তা পৌঁছে দিতে চান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করছেন দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে সরিয়ে দেওয়ায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। ভয়টা হলো— অপরাধ করলে কোন ছাড় নেই, ছাড় পাওয়া যাবে না।
নিজেদের সংযত করার নির্দেশও পাচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। দল ও শেখ হাসিনার সুনাম ক্ষুণ্ন না হয়- এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতারা।
শোভন-রাব্বানীর ঘটনা থেকেও শিক্ষা নিতে চান তারা। সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ছাত্রলীগে কোন গ্রুপিং নেই। এখানে সবাই শেখ হাসিনার গ্রুপ। ছাত্রলীগকে আমরা অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ধারায় ফিরিয়ে নিতে চাই। মানুষের মাঝে থাকা ইমেজ সংকটকে দূর করতে চাই।
সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো ওভারকাম করা। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসছে সেগুলো যেন আমাদের বিরুদ্ধে না আসে।