রংপুরে জয়ী লাঙ্গল, পরাজিত জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 13:27:53

রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়েছে লাঙ্গল। আর পরাজিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। যার নেতিবাচক প্রভাব সুদূর প্রসারী হতে পারে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিরসহ বড় একটি অংশ নির্বাচন থেকে দূরে ছিলেন। পার্টির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে না পারার দায় এড়াতে পারেন না জিএম কাদের।

আর এ ঐক্যবদ্ধ করতে না পারাকেই জিএম কাদেরের পরাজয় হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে বয়কটের সংস্কৃতি চালু হলো এর রেশ অনেকদিন থাকবে। অন্য কোনো নির্বাচনে আর কোনো গ্রুপ যদি কাউকে বয়কট করে তখন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন জিএম কাদের। পার্টির চেয়ারম্যানের উচিত ছিল, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের জন্য বয়কটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

স্বাভাবিকভাবেই বয়কটকারীদের এড়িয়ে চলার কথা বয়কটের শিকার রাহগীর আর মাহি সাদ এরশাদের। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যদি সাদের গ্রুপ বয়কট করে, তখন কি হবে? নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সাদের একটি বলয় তৈরি হয়েছে রংপুরে। আবার স্থানীয় এমপি হিসেবে একটি বলয় তৈরি হবে এটাও স্বাভাবিক। যা জাতীয় পার্টির জন্য ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

মোস্তফা কিংবা ইয়াসিরের কোনো নির্বাচনে সাদের বলয় যদি ‍হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তখন কি হবে? এমন শঙ্কাই প্রকাশ করেছেন জাপার নেতারা।

সিনিয়র নেতারা একে জিএম কাদেরের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, পার্টির চেয়ার‌ম্যানের উচিত ছিল, রংপুর গিয়ে সবাইকে নিয়ে বসে সমঝোতা করে দেওয়া। এটা না করে জিএম কাদের সঠিক কাজ করেননি। আবার পার্টির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় চেইন অব কমান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটিও খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।

মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেছেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) আর কাদের স্যার রংপুরে এসে সবাইকে নিয়ে বসবেন। সেখানে ফয়সালা হবে। পার্টি ঐক্যবদ্ধ হবে। কিন্তু আমাদের ডাকাই হয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ এ কথা ঠিক যে পার্টিতে ডিভিশন তৈরি হয়েছে। রংপুরের লোকজন চেয়েছিলেন স্থানীয় প্রার্থী। রংপুরবাসীর মতের বিপক্ষে গিয়ে রাজনীতি করলে জাতীয় পার্টির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এবারের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু ভবিষ্যতে কখনও ভোট হলে রংপুরবাসী প্রতিশোধ নিয়ে বসতে পারেন।’

সাদকে বয়কট প্রশ্নে ইয়াসির বলেন, ‘পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ড আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাদকে মনোনয়ন দেয়। এটা রংপুরের লোকজন ভালো ভাবে নেননি। যে কারণে ভোটাররা ভোট বর্জন করেছেন।’

প্রশ্ন ছিল, আজ আপনি যদি সাদের জায়গায় থাকতেন, আর আপনি বয়কটের শিকার হতেন, ভবিষ্যতে কি তাদের জন্য জান প্রাণ দিয়ে কাজ করতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়াসির বলেন, ‘এটা কঠিন হতো।’

এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে সাদ এরশাদ ৫৮ হাজার ৮৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ৫ অক্টোবর এ ভোট হয়। এরশাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৪৭ ভোট। আর এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (মোটরগাড়ি) ১৪ হাজার ৯৮৪ ভোট পেয়েছেন। ভোটার উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। ভোট পড়েছে মাত্র ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর