বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে জ্ঞানপাপীরা কথা বলে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-17 23:15:42

সম্প্রতি ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে স্বাক্ষর হওয়া কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে দেশে তৈরি হওয়া সমালোচনাকে আবারও উড়িয়ে দিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে ফেনী নদীর পানি নিয়ে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক ও এলপিজি গ্যাস রফতানি নিয়ে বিরোধীদের ‘অহেতুক’ সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

বিরোধীদের হৈচৈ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটা (দুই চুক্তি নিয়ে) নিয়ে এত চিৎকার এবং স্লোগান অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে। যাব কোথায় আমরা?’

মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য জ্ঞানপাপীরা এমন কথা বলে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এলপিজি গ্যাস রফতানি প্রসেঙ্গ সরকারপ্রধান বলেন, ‘এলপিজি হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস। আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করি। তারপর সিলিন্ডারে সবাইকে দিয়ে দেই। যাতে রান্না করতে পারে। একসময় অনেক দাম ছিল। এখন অনেকগুলো কোম্পানিকে আমরা ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে দিয়েছি। তাই সিলিন্ডারের দাম কমে যাচ্ছে। অনেকে ব্যবহার করাও শিখছে। সেই বোতলজাত থেকে গ্যাস যাবে ত্রিপুরায়। আমরা আমদানি করে বোতলজাত করে রফতানি করছি। আমাদের আরেকটা রফতানিজাত পণ্য বাড়ছে। বাংলাদেশের যেসব ব্যবসায়ী আছে তারাই লাভবান হবে। আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না।’

মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরাবাসীর অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই ত্রিপুরাবাসী আমাদের দেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। খাদ্য দিয়েছিল। বাসস্থান দিয়েছিল। মানবিক কারণে তাদের পানি দেওয়া হচ্ছে।’

এলপিজি রফতানিতে বাংলাদেশের লাভ বেশি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে। সেখান থেকে আমরা ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। এছাড়া আরও এক হাজার মেগাওয়াট তথা সর্বমোট ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতে থেকে কিনে আনছি। বিনিময়ে এলপিজি তাদের দিচ্ছি। লাভ লোকসান হিসেবে করলে বাংলাদেশেরই বেশি লাভ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে যদি কেউ নায্য অধিকার আদায় করে থাকে, আমি শেখ হাসিনা করেছি। আমরা গঙ্গা পানির নায্য হিস্যা এনেছি। স্থল সীমান চুক্তি আমরা করেছি। সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার আমরা রক্ষা করতে পেরেছি।’

সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়-বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জনগণের ভোটেই যদি নির্বাচিত না হতাম, তাহলে তো খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটার বিহীন ভোট করেছিল। জনগণ ভোট দেয়নি। সারাদেশে আর্মি নামিয়ে এবং সমস্ত এজেন্সি দিয়ে সে ফলাফল ঘোষণা করল তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া)। তৃতীয়বারের সে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় ছিল দেড় মাস। দুই মাসও থাকতে পারেনি। ভোটচুরি করেছিল বলে জনগণ টেনে নামিয়েছিল আন্দোলন করে। তখন আমরা ওই নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। যার জন্য খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। আজকে যদি জনগণ আমাদের ভোট না দিত তাহলে বিরোধী দল আন্দোলন করে আমাদের নামাতে পারত। এ পর্যন্ত তারা কিছুই করতে পারল না।’

বিএনপি আন্দোলন করতে না পারার কারণ হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা নির্বাচনকে নিয়েছে একটা বাণিজ্য হিসেবে। এক সিট বিক্রি করেছে তিনজনের কাছে। কেউ লন্ডনে টাকা নিয়েছে, কেউ গুলশান অফিস থেকে, কেউ নিয়েছে পল্টন অফিস থেকে। এক সিটে যখন তিনজনকে নমিনেশন দেয়, সেখানে ভোট দেবে কে কাকে। তারপরও তাদের কিছু প্রার্থী ইলেকশনে জিতছে। তারা পার্লামেন্টে আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের এক নেতা খুব বক্তৃতা দিচ্ছে- এই সরকার ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই, উনি কবে কখন কোন নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী ছিলেন? যখনি অবৈধভাবে কেউ ক্ষমতায় আসছে, তার সঙ্গে চলে গেছেন মন্ত্রী হতে। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে ছিলেন। আবার এরশাদ যখন ক্ষমতায় আসলো, সাধারণ ক্ষমায় সাজা মওকুফ হয়ে এরশাদের কেবিনেটে মন্ত্রী হলেন তিনি।’

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মহিলা শ্রমিক লীগের জেষ্ঠ সহ-সভাপতি সুলতানা আনোয়ারা। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি সুরাইয়া আক্তার। সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামছুন্নাহার ভূইয়া এমপি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর