নভেম্বর জুড়েই চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন। সে ধারাবাহিকতায় আগামী শনিবার (১৬ নভেম্বর) হতে যাচ্ছে সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। এরই মধ্যে সম্মেলনের আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের আয়োজন।
দীর্ঘদিন পরে সম্মেলন হচ্ছে। তাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন সংগঠনটির তৃণমূলের নেতকর্মীরা। পদ প্রত্যাশীদের সমর্থক নেতাকর্মীরা মিছিল, শোডাউন করে জমিয়ে রেখেছেন দলীয় কার্যালয়, তিন নম্বর পার্টি অফিস।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে এক ডজন নেতা এগিয়ে আছেন। তাদের মধ্য থেকেই দু’জনকে বসানো হবে শীর্ষ দুই পদে। এরই মধ্যে আলোচিত প্রার্থীদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরিও শেষ।
এদিকে শীর্ষ পদের লড়াইয়ে নেমেছেন বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। পদ পেতে জোরালো লবিং তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তদবির করছেন দলের নীতি নির্ধারকদের দরবারে। গেল কয়েক সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও গণভবনে তাদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করার মতো।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের দু’জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চাইছেন। আর সেটি হলে কপাল খুলতে পারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের। তৃণমূল কর্মীদেরও চাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা মূল্যায়িত হোক।
জানা গেছে, সভাপতি পদের দৌড়ে আলোচনায় আছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ, মঈন উদ্দীন মঈন, আফজালুর রহমান বাবু, মতিউর রহমান মতিসহ বেশ কয়েকজন। তবে সবচেয়ে আলোচিত পদ হতে যাচ্ছে সাধারণ সম্পাদক পদ। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির চার সাংগঠনিক সম্পাদক- খায়রুল হাসান জুয়েল, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ শাকিব বাদশা ও আবদুল আলীম বেপারী আছেন পদের দৌড়ে।
তাদের টেক্কা দেয়ার চেষ্টা করছেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ।
এছাড়াও সংগঠনটির দফতর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আবুল ফজল রাজু কেন্দ্রীয় শীর্ষ পদের লড়াই বিজীয় হয়ে চমক দেখাতে চান।
নির্মল রঞ্জন গুহ: স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং আসন্ন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতিতে পথচলা নির্মল রঞ্জন গুহের। ছাত্রজীবনে তিনি নয়াবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়কেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আফজালুর রহমান বাবু: স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতি ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদকও ছিলেন।
মতিউর রহমান মতি: মতিউর রহমান মতি সংগঠনটির বর্তমানে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা মতিউর রহমান মতি মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১/১১ এর দুঃসময়ে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও।
আব্দুল আলীম বেপারী: স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বেও।
খায়রুল হাসান জুয়েল: ওয়ান ইলেভেনের দুঃসময়ে টিপু-বাদশাহ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথ কাঁপিয়েছেন, তখন শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে যুক্ত হওয়ায় কারাগারে বন্দী ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল। ক্লিন ইমেজেরে এ নেতা এবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
শেখ সোহেল রানা টিপু: সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার দৌড়ে অন্যতম আলোচিত প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপুও। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িত। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ওয়ান ইলেভেনে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত।
সাজ্জাদ সাকিব বাদশা: স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। বাদশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও ওয়ান ইলেভেনের দুঃসময়ে কালোত্তীর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের থিঙ্কট্যাঙ্ক খ্যাত ‘সিআরআই’ এর সঙ্গেও সংযুক্ত তিনি।
গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু: স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুও। পারিবারিকভাবে তিনি গোপালগঞ্জের সন্তান। ছাত্রজীবনে সাচ্চু ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রলীগের দুই মেয়াদে সভাপতি, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই মেয়াদে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তার নামে মিরপুরে ‘ক্যাডার ভিত্তিক’ রাজনীতির অভিযোগও আছে।
আবুল ফজল রাজু: আবুল ফজল রাজু বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক লীগের পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগের কমিটির তিনি নির্বাহী সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ধানমন্ডির ল কলেজের আওয়ামী আইন ছাত্রপরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ছিলেন। ১৯৯০-৯২ রূপগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুব্রত পুরকায়স্থ: স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী। তিনি সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসার মতো প্রার্থী কারা জানতে চাইলে সংগঠনটির প্রথম সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, অপেক্ষাকৃত বয়সে যারা তরুণ, দলের প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল, দীর্ঘদিন যারা দলীয় কার্যক্রমের সঙ্গে, সংগঠনের সঙ্গে, আদর্শের সঙ্গে কাজ করেছে, দুর্যোগে দুর্বিপাকে পরীক্ষিত, তারাই নেতৃত্বে আসবে। সুসময়ে এবং দুঃসময়ে যারা কাজ করেছে, তাদের নিয়েই আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন বাহাউদ্দিন নাছিম, সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ।
সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। ৩ বছরের কমিটি ৭ বছর পার করে দিয়েছে। শনিবার কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিনই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হবে।