বিদিশা সরে গেলেই বদলে যাবেন এরিক!

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-25 14:19:12

শেখানো বক্তব্য আওড়াচ্ছেন এরিক এরশাদ। মা বিদিশা কাছ থেকে সরে গেলেই সব উল্টে যাবে বলে মনে করছেন তার ব্যক্তিগত স্টাফ ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের সদস্যরা।

তারা দাবি করেছেন, এরিকের সঙ্গে বিদিশা আঠার মতো লেগে আছেন। জনি নামে তার একজন সহকারী আছেন, যিনি সার্বক্ষণিক আঠার মতো লেগে আছেন এরিকের সঙ্গে। এমনকি টয়লেটে গেলেও দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন। বাসার ভেতরে ব্যক্তিগত স্টাফদের সঙ্গে কথাবার্তাও নজরদারি করা হচ্ছে। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলতে গেলেই জনি গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। যাতে অন্য কারো কথায় বদলে যেতে না পারেন এরিক।

এরিকের খাবার দাবার কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন স্টাফরা। একজন ট্রাস্টি জানিয়েছেন, এরশাদের মৃত্যুর পর বাসার খরচ আরও বেড়ে গেছে। যখন যা প্রয়োজন হচ্ছে, সবই সরবরাহ করা হচ্ছে। এরিক এখন নিজেও অনেক সময় সুপারশপে যাচ্ছেন পছন্দের খাবার কিনতে। তার হোটেলে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। এ জন্য গুলশান ক্লাব, বনানী-১২ নম্বর রোডে প্যান টাও রেস্টুরেন্টসহ বেশ কিছু হোটেল রয়েছে, যেখানে মাস শেষে বিল পেমেন্ট দেওয়া হয়।

গত জুলাই-আগস্ট মাসে গুলশান ক্লাবের বিল বাবদ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে সেবাযত্নেরও কোনো ঘাটতি হওয়ার সুযোগ দেখছেন না তারা। ২০০৫ সালে বিদিশার সঙ্গে এরশাদের ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর থেকে শিশু এরিককে যারা এতোদিন লালন পালন করেছেন, তারা সবাই এখনও রয়েছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর এখনও কোনো স্টাফ কমানো হয়নি।

প্রেসিডেন্ট পার্কে এখন এরিকের দু’জন সহকারী (মতিয়ার ও ওসমান), বিপ্লব ও ডিউক নামে দু’জন বাবুর্চি, নিপা ও রুবি নামে দু’জন বুয়া, তিনজন ড্রাইভার (আব্দুল আউয়াল, এমএ মান্নান ও আব্দুল আজিজ) এবং কেয়ারটেকার আব্দুল ওয়াহাব দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষিত এসব স্টাফ। প্রয়াত এরশাদ অনেক জনসভায় বলেছিলেন, আমি এরিককে সময় দিতে পারি না। রাজনৈতিক কারণে অনেক সময় বাসার বাইরে থাকি। স্টাফরাই এরিকের দেখভাল করেন। সেই বিশ্বস্ত সব স্টাফ এখনও বিদ্যমান।

হাউজ টিউটরকে মাসে ৪০ হাজার, মিউজিক টিচারকে ৩৫ হাজার টাকা, বাজার খরচ বাবদ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা সরবরাহ করা হচ্ছে যথারীতি। পাঁচটি গাড়ি ঘুরে ফিরে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। যাতে ব্যাটারি বসে না যায়।

ওই ট্রাস্টি জানান, মঙ্গলবারও বাসার খরচের জন্য ৫০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে। মূলত এরিক চিকিৎসকের পরামর্শে কিছুটা ডায়েট কন্ট্রোল করছেন। ওজন বেড়ে গেলে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আগে তার ওজন ছিল ৮৪ কেজি। এখন কমিয়ে ৬৯ কেজিতে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

বিদিশা বাসায় আসার সপ্তাহ দু’য়েক আগে জাতীয় পার্টির বনানী অফিসে এসেছিলেন এরিক। তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের ট্রাস্টি মেজর (অব.) খালেদ আক্তারের কক্ষে প্রবেশ করেন। তাকে দেখে একজন জাপা নেতা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, আরে তুমি দেখি অনেক স্লিম হয়ে গেছ, আমিতো ওজন কমাতে পারছি না। তখন এরিক জবাব দিয়েছিলেন, আমি ১৩ কেজি ওজন কমিয়েছি। ওজন কমানোর একমাত্র ওষুধ হচ্ছে জিহ্বা। যদি জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাহলেই সম্ভব। আমি জিহ্বাকে না বলে দিয়েছি। রাতে একটি রুটি ও ছোট্ট এক টুকরো মাছ, এর বেশি খাচ্ছি না।

এরিকের যেমন দ্রুত ওজন বেড়ে যায়। তেমনি দ্রুত কমাতেও পারেন। গত রমজানে ৩০ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন। চিকিৎসকও নাকি তখন বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট পার্কের জায়গাটি ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। তিনি ডেভেলপার দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করিয়েছিলেন। নিচতলায় পার্কিং, উপরে রয়েছে পাঁচটি ফ্লোর। তার মধ্যে পঞ্চম তলায় পুরো ৭২০০ বর্গফুটে থাকতেন এরশাদ। নিজের ভাগে পাওয়া একটি ফ্ল্যাট লিখে দিয়েছেন বিদিশাকে। অন্য ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন এরশাদ নিজেই। বিদিশাও তার ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দিয়েছেন।

জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে ট্রাস্টি জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানিয়েছেন, সব কিছু চলছে ট্রাস্টের অধীনে। প্রেসিডেন্ট পার্কও ট্রাস্টের অধীনে। আগের সব ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এখানে তাকে (জিএম কাদের) টেনে আনাটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

ছেলে এরিককে দেখার কথা বলে গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বিদিশা এসে বাসায় ঢুকে পড়েছেন। আর বের হচ্ছেন না, বুধবার পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছেন। নিজেদের অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। জীবন গেলেও তাকে সন্তানের কাছ থেকে আলাদা করা যাবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।

এতে অস্বস্তিতে আছেন এরশাদ পরিবারের সদস্যরা। না পারছেন তাকে বের করে দিতে, আবার না পারছেন মেনে নিতে। আপাতদৃষ্টিতে ছেলে এরিকের কাছে আসতে মাকে বাধা দেওয়াটা অনেকটা অমানবিক মনে করা হচ্ছে। আবার এরশাদ যাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন, তার অবস্থানও ভালোভাবে দেখছেন না পরিবারের লোকজন। আবার বিদিশা বাসায় ঢুকেই ক্ষান্ত হননি, তার নিজের কিছু লোকজনকেও বাসায় ঢোকানোর চেষ্টা করছেন। এটাতে সন্দেহ আরও বেড়েছে।

অন্যদিকে নিজের ও মায়ের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন এরিক। এ প্রসঙ্গে জাপা নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, এরিক অটিস্টিক (প্রতিবন্ধী)। তাকে ফুঁসলিয়ে কাজটি করা হয়ে থাকতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর