মুক্তির দিশা ভাসানীর রাজনীতিতেই খুঁজতে হবে: সাকি

বিবিধ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 16:03:12

দুঃশাসন আর নিপীড়নের যে ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাচ্ছি, তার থেকে মুক্তির দিশা আমাদের মওলানা ভাসানীর রাজনীতিতেই খুঁজতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ বহু দিক দিয়ে বিপন্ন। আজকে মওলানার অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। তার মতো করে ‘খামোশ’ বলে হুঙ্কার ছাড়বে—এমন মানুষের অভাব অনুভূত হচ্ছে। দেশের মানুষের আজ ভোটের অধিকার নেই—নেই কথা বলবার স্বাধীনতা। জবাবদিহিতাহীন শাসনে নজিরবিহীন সম্পদ আজকে দেশ থেকে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক দেশবিরোধী চুক্তি।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মওলানা ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির উদ্যোগে ‘মওলানা ভাসানী ও আমাদের সময়ের রাজনীতি’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মওলানা ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার বক্তারা

সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, পেঁয়াজ সঙ্কট বা আবরার হত্যা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সব মিলিয়ে আমরা দুঃশাসন আর নিপীড়নের যে ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাচ্ছি, তার থেকে মুক্তির দিশা আমাদের মওলানা ভাসানীর রাজীনীতিতেই খুঁজতে হবে। এক ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা তুলে দেওয়া সংবিধান আজকে আমাদের সকল সঙ্কটের উৎস, মওলানা ভাসানী এই বিষয়ে ১৯৭২ সালে কথা বলেছেন। সুন্দরবনকে রক্ষা কিংবা অর্থনীতির সমূহ পতন থেকে বাঁচাতে হলে, একই সাথে জবাবদিহিতা আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার আগে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই জন্য দরকার জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। মওলানা ভাসানী আমাদের সেই রাজনীতির পথ প্রদর্শন করেছেন। যতই দিন যাবে, মওলানা ভাসানী আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন।

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাজনীতিতে গান্ধীর ধারা ছিল অহিংস, মওলানার রাজনীতি ছিলো বলপ্রয়োগের। তাকে টাইম পত্রিকা ‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’ আখ্যা দিয়েছিল উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে, মওলানাকে নেতিবাচকভাবে উত্থাপন করার জন্য। কিন্তু মওলানা যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন তা কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারবার নয়, তা মুক্তির আলো জ্বেলেছিল।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যে মুক্তির জন্য আমরা সংগ্রাম করেছিলাম, তা কতদূর? ২২ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে মওলানা ভাসানী ঘোষণা করেছিলেন—পিন্ডির জিঞ্জির ভেঙেছি দিল্লির গোলামি করবার জন্য নয়। আজকে ভিনদেশি রাষ্ট্রের হুকুমে আমাদের নীতি নির্ধারণ হয়। মওলানা ভাসানী সত্যি কথা বলা শিখিয়েছেন, সেই সত্যের শক্তির ওপর ভরসা করেই আমাদের দেশকে মুক্ত করার রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কোন একক ব্যক্তির অবদান নয়। বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন, সন্দেহাতীতভাবেই মওলানা ভাসানী তাদের মাঝে অন্যতম। ভোটের রাজনীতি বা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি নয়, ভাত-কাপড়ের রাজনীতি দিয়েই তিনি মানুষকে সংগঠিত করেছেন।

মওলানা ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আগতরা

মওলানা ভাসানীর জীবনীকার ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ভাসানীকে আজকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্মরণ করা হয় না। তার ভূমিকাকে আড়াল করা হয়। অথচ ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ, কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনসহ মুক্তির সংগ্রামের সকল ঘটনায় মওলানা ভাসানী ছিলেন অগ্রনায়ক।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কারও জন্য অপেক্ষায় না থেকে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ পেঁয়াজ নিয়ে সঙ্কটে আছে, ভোট নিয়ে সঙ্কটে আছে, সঙ্কটে আছে নিপীড়ন-নির্যাতন নিয়ে। ভাসানীর পথ ধরে মানুষকে ডাক দিতে পারলে মানুষ ঠিকই নেমে আসবে।

মওলানা ভাসানীর একান্ত সহচর সৈয়দ ইরফানুল বারী স্মৃতিচারণ করে বলেন, আসাম এবং পূর্বপাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে মাওলানা ভাসানী জনগণের কথাই তুলে ধরেছিলেন। লক্ষ লক্ষ কৃষককে সংগঠিত করে তিনি জমিদার প্রথার ভিত্তি কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি পূর্ববাংলার কৃষকদের ওপর পাকিস্তানের শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবার আগে আওয়াজ তুলেছিলেন মওলানা ভাসানী।

গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ফারাক্কা লংমার্চের মধ্য দিয়ে ভাসানী যে রাজনীতির সূচনা করেছিলেন, তা শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে নয়, প্রাণ-প্রকৃতি-জীবন-মাটি রক্ষায় আজকে যে চেতনা বিশ্বজুড়ে আমরা দেখছি, তার সূচনা হিসেবেও আজও প্রাসঙ্গিক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর