লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান গোপালগঞ্জ-১ (মকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলা) আসন থেকে পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফারুক খান বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী (২০০৯-২০১১) এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে (২০১২-২০১৩) দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য।
এক সময়ের সামরিক কর্মকর্তা ও বর্তমানের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান রোববার (২৪ নভেম্বর) মুখোমুখি হয়েছিলেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের। চলমান শুদ্ধি অভিযান, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও জাতীয় সম্মেলন নিয়ে তাঁর নিজের ও দলীয় ভাবনা তুলে ধরেন।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: ৩০ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্প্রতি যে শুদ্ধি অভিযান চলছে তার ছাপ পড়েছে সম্প্রতি হওয়া সহেযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতে। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাদের চিন্তা কী?
ফারুক খান: আওয়ামী লীগে কোন শুদ্ধি অভিযান হচ্ছে এই কথাটার সঙ্গে আমি একমত নই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময় বিশুদ্ধ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আজকে থেকে অনেক বছর আগেও যতদূর সম্ভব সৎ নিষ্ঠাবান লোকদেরকে দিয়ে দেশ পরিচালনা, দল পরিচালনা করছে। যারা এর বাইরে গেছে অতীতে আমাদের কাছে উদাহরণ আছে লতিফ সিদ্দিকীর। তিনি কেবিনেটের খুবই প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন, খুবই প্রভাবশালী বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি অনিয়ম করেছেন বলে তাকে প্রথমে কেবিনেট থেকে, এরপর প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তিনি এখন জেলে আছেন। একই ধারাবাহিকতায় আরো উদাহরণ দিতে পারি, ভুল করার কারণে আওয়ামী লীগের কিছু সংসদ সদস্য আছে তারা এখন দুদকের সিঁড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। একই ধারায় বর্তমানে অভিযানগুলো চলছে। আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, শুদ্ধ মানুষ, যারা দলকে ভালোবাসে, দেশেকে ভালোবাসে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে, সৎ, নিষ্ঠাবান তাদের দ্বারা দল ও দেশ পরিচালনা করব। সেটাই তো হচ্ছে। নতুন করে কোন শুদ্ধি অভিযান হচ্ছে না।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। তাদের সম্মেলন হতে যাচ্ছে ৩০ নভেম্বর। আওয়ামী লীগের যেকোনো পদের জন্য অর্থাৎ নির্বাচিত কোনো পদ হোক অথবা দলীয় কোন পদ হোক, বিশেষ করে তিনটা জিনিস মাথায় রাখি- সবথেকে প্রথম ও প্রধান হচ্ছে তিনি কতটা নিষ্ঠাবান, দলের সাথে তার সম্পৃক্ততা, দলের প্রতি তার আনুগত্য, দলকে নিয়ে তিনি অতীতে কী কাজ করেছেন। দ্বিতীয়ত, এলাকায় তার জনপ্রিয়তা, তৃতীয়ত যে দায়িত্ব তাকে দেওয়া হচ্ছে সে দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা। সুতরাং এই মুহূর্তে একটা অভিযান চলছে যারা সৎ নিষ্ঠাবান তাদের মধ্য থেকেই ঢাকা মহানগরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদগুলি নির্বাচিত হবে বলে মনে করি।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: সম্প্রতি দুটি কাউন্সিলে নির্বাচিত জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম খসরু, আনিসুর রহমান নাঈম সম্পর্কে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে দলের অবস্থান কী?
ফারুক খান: আসলে রাজনীতি একটা বিরাট অঙ্গন। যে দুই ব্যক্তির নামে অভিযোগ এসেছে সে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং খতিয়ে দেখার পরে যদি এগুলি সত্যবলে প্রমাণিত হয় তাহলে নিশ্চয়ই দল ব্যবস্থা নেবে।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে কী কী পরিবর্তন হতে পারে?
ফারুক খান: আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এটা বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে খুবই আলোচিত ব্যাপার। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের সকল স্বপ্নের আশা আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল এই সবকিছু কিন্তু আসছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমবদ্ধ না, সারা বিশ্বে আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ যখন আলোচিত হয় তখন কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিয়েও আলোচনা হয়। কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ বিশ্বে এই মর্যাদা অর্জন করেছে। সুতরাং এমন একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলন আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আওয়ামী লীগের অতীতের প্রায় ২০টা সম্মেলন দেখেন প্রতিটা সম্মেলনে দেখবেন আমরা নবীন এবং প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করেছি। আমরা কমিটি করার সময় খেয়াল রেখেছি-যারা বিতর্কিত তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আগামী সম্মেলনেও এর ব্যত্যয় ঘটবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের নেত্রী চেষ্টা করছেন দল ও সরকারকে আলাদাভাবে পরিচালনা করতে। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে বাংলাদেশে এটা এখনো শতভাগ করা সম্ভব নয়। তবে তিনি অনেক সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি চান যে দল এবং সরকার আলাদাভাবে দায়িত্ব পালন করুক।
তার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আমি মনে করি। উপকমিটির একজন সদস্য হিসেবে বলতে পারি- আমাদের মিটিং হয়েছে আলোচনা চলছে সেখানে বেশকিছু প্রস্তাব আসছে। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু সংখ্যা বাড়ানোর জন্যসহ অন্যান্য প্রস্তাব আসছে। আমি প্রস্তাব করেছি যে-আমাদের দলের বিভিন্ন পর্যায়ে যে উপদেষ্টামণ্ডলী আছে তার সুনির্দিষ্ট নাম্বার এবং ব্যাখ্যা থাকা উচিত। এছাড়া আমাদের কাউন্সিলগুলো যাতে আরও সহজ হয় সেজন্য আরেকটু বিস্তারিত ভাবে এর ব্যাখ্যা থাকলে ভালো হয়। গঠনতান্ত্রিক কিছু পরিবর্তন হতে পারে বলে আমি মনে করি। অনেকে অনেক ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে, কেউ কেউ কমিটিতে নাম্বার বাড়ানো প্রস্তাব করেছে, তবে আমি মনে করি কমিটির আকার বাড়ানোর থেকে কোয়ালিটি লোক নেওয়া ভালো। প্রেসিডিয়ামেও পরিবর্তন আসবে।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলরদের দলীয় প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে দলের চিন্তা কী?
ফারুক খান: আমরা আওয়ামী লীগের বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদ এবং ইউনিয়ন পরিষদে যে চেয়ারম্যানপদ এটা নিয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা দেখেছি, দলীয় প্রতীক ব্যবহারে কতগুলি সুফল যেমন আছে তেমনি কতগুলি সমস্যাও আমাদের চোখে পড়েছে। এই ব্যাপারগুলি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। রিসার্চ হচ্ছে আমি বলব। সুতরাং এই মুহূর্তে বলতে পারবনা কী হবে! তবে আলোচনা করে আগামীতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: আপনাকে ধন্যবাদ।
ফারুক খান: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকেও ধন্যবাদ।