বিতর্কিতদের নিয়েই ছাত্র সমাজের কমিটি!

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 01:42:28

জাতীয় ছাত্র সমাজের কমিটিতে বিতর্কিতদের পদায়ন করার অভিযোগ উঠেছে। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে প্রথম পরীক্ষায় সফল মনে করছেন না অনেক নেতাকর্মীই।

বিশেষ করে সভাপতি ইব্রাহিম খান জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনকে নিয়ে অনেকেই আপত্তি প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন দু'জনের কারোরই ছাত্রত্ব নেই। সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর সাধারণ সম্পাদক যাকে করা হয়েছে তিনি কখনই নাকি ছাত্র সমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এখনও স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। হঠাৎ করে নেতা নির্বাচন করা সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের নেতারা।

ছাত্র নেতারা দাবি করেছিলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মতো ঢাবি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের দিয়ে কমিটি করার। কিন্তু তার আশপাশ দিয়েও যায়নি কমিটি। যে কারণে কমিটি গঠন নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে ছাত্র নেতাদের মধ্যে। কেউ কেউ মনে করছেন সিনিয়র নেতাদের রহস্যজনক লবিং তদবিরের দ্বারা দূষিত নব গঠিত কমিটি।

দীর্ঘ ৫ বছর পর ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের কাউন্সিল। এতে ছাত্র নেতারা প্রায় সকলেই ভোটের পক্ষে মতামত দেন। প্রস্তুতিও ছিলো ভোট আয়োজনের। ভোটে কমিটি গঠনের জন্য আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সভাপতি পদে ৮ জন এবং সম্পাদক পদে ৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দেন।

কিন্তু কাউন্সিলের শেষ পর্যায়ে বক্তব্য দিতে এসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, 'তোমাদের পার্টির চেয়ারম্যানের উপর আস্থা আছে কিনা। তোমরা নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব তার উপর দিতে পারো কিনা।' বারবার বলার পর অল্প সংখ্যক কাউন্সিলর অনেকটা চক্ষু লজ্জার কারণে হাত উঁচিয়ে সমর্থন দেন। অনেকটা জোর করে তখন সমর্থন আদায় করা হয় সিলেকশনের পক্ষে।

কথা ছিলো পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের শীর্ষ কয়েকটি পদে নেতা নির্বাচন করবেন। তারা বসে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। কিন্তু ২৪ নভেম্বর যে কমিটি দিয়েছেন সেই কমিটির সভাপতি সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ উঠেছে।

সভাপতি ইব্রাহিম খান জুয়েল বছর দেড়েক আগে ডিএসসিসি ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। সেখানে প্রার্থী হওয়াকে অযোগ্যতা বিবেচনা করা হচ্ছে না। ওই নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা নিয়ে যত আপত্তি উঠেছে। ইসিতে দাখিল করা হলফনামায় সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার কলামে তিনি লিখেছেন এইচএসসি পাশ। দেড় বছর আগে যিনি এইচএসসি পাশ ছিলেন যার পড়াশোনা নিয়ে অনেকে সন্দিহান, তাকে সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত করায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

ইব্রাহিম খান জুয়েল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাড়াহুড়োর কারণে এমনটি হয়েছিলো। আমি আসলে দনিয়া কলেজে এলএলবি ফাইনাল ইয়ারে পড়াশুনা করছি। অনেকদিন ধরে ছাত্র সমাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।

সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন মেজর (অব.) বানা মোহাম্মদ সোহেল এমপির পিএস আল মামুন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, এই নেতা কোনো দিনই ছাত্র সমাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এখনও স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। হঠাৎ করে তিনি প্রভাবশালী প্রার্থীর তালিকায় উঠে এসেছেন। অনেক যোগ্য নেতাকে ডিঙ্গিয়ে শুধুমাত্র তদবিরের জোরেই নির্বাচিত হয়েছেন।

ছাত্র সমাজের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ। ওই সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসান, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলে মিজানুর রহমান মিরু। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ২০১৮ সালের নভেম্বরে ভেঙে দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। প্রস্তুতি কমিটিতে মোড়ল জিয়াউর রহমানকে আহ্বায়ক ও ইয়াছিন মেজবাহকে সদস্য সচিব করা হয়।

মোড়ল ও ইয়াছিন কমিটি সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় চলতি বছরের ২৮ জুনে বাতিল করে নতুন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়। সেই কমিটিতে জামাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও ফয়সাল দিদার দীপুকে সদস্য সচিব করা হয়। তারা ১৩ নভেম্বর সম্মেলনের আয়োজন করে। ২৪ নভেম্বর সভাপতি সম্পাদকসহ ১৩ পদে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন জিএম কাদের। ১০ দিনের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটি উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর