আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়বে!

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-29 07:59:12

ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন চলতি মাসে। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী নেতৃত্ব আরো বাড়বে।

এরই মধ্যে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও তারা মাথায় রেখে আগাচ্ছেন। আরপিও অনুসারে ২০২০ সাল নাগাদ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে আশাবাদী ক্ষমতাসীনরা।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বাস্তবায়ন, দলে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, দলীয় কার্যক্রম আরো গতিশীল করা ও নারী নেতৃত্ব আরো এগিয়ে নেওয়ার মতো চারটি লক্ষ্য সামনে নিয়ে আসন্ন সম্মেলনে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে নারী নেতৃত্ব প্রায় ৩৩ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকারি দল।

আসন্ন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রভাবশালী ও নানা কারণে অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন নেতা এবার দলের কেন্দ্রীয় পদ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। বাদ পড়তে যাওয়া নেতাদের সংখ্যা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি হতে পারে। কেন্দ্রীয় কমিটির এ পরিবর্তনকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, অতীতের প্রায় ২০টা সম্মেলন দেখেন, প্রতিটা সম্মেলনেই আমরা নবীন এবং প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করেছি। আমরা কমিটি করার সময় খেয়াল রেখেছি, যারা বিতর্কিত তাদের বাদ দিয়েছি। সুতরাং আগামী সম্মেলনেও এর ব্যত্যয় ঘটবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের নেত্রী চেষ্টা করছেন দল ও সরকারকে আলাদাভাবে পরিচালনা করতে।

দলীয় সূত্র মতে, বয়স্ক, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির রদবদলে নারী নেত্রীদের প্রাধান্য বেশি থাকতে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নারী নেত্রীর মাঠে রাজনৈতিক অর্জন, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও কার্যক্রম ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সরকারি দলের শীর্ষ নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে এসব ‘আমলনামা’ বা প্রতিবেদন সংগ্রহ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের শীর্ষ কমিটিতে জায়গা করে দিতে তিনি তাদের বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ প্রত্যাশী নারীরাও রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়। পার্টি অফিসে উপস্থিতি, সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে যারা আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদে ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে যোগ্যতা ও দলের জন্য ত্যাগ বিবেচনায় আসন্ন জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা ঠাঁই পাবেন না, তাদের পরে নিজ জেলা ও উপজেলার কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। দলের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের জন্মের পর প্রায় পাঁচ দশক পর এবারই প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দেখা যায়, ২০২০ সালের মধ্যে যে কোনো রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে দেশের সব দলের প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাধ্যবাধকতা আছে। ২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে- এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে ইসিতে নিবন্ধিত হয় রাজনৈতিক দলগুলো।

যদিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তৃণমূলের সব কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণের পথে এখনও অনেকটা পিছিয়ে আছে দলটি। তবে এখনো পর্যন্ত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে
আওয়ামী লীগের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব সবচেয়ে বেশি। ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়সহ অন্য কমিটিগুলো নারীদের উপস্থিতিতে কয়েকগুণ এগিয়ে আছে। ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব প্রায় আট শতাংশ বাড়লেও বিএনপিতে বেড়েছে মাত্র এক শতাংশ।

অন্যদিকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর মাত্র এক বছর বাকি থাকলেও দেশের কোনো দলই এখনো পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ সংখ্যার কাছাকাছি যেতে পারেনি।

ইসিকে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ জানায়, দলটির কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সব কমিটিতে বর্তমানে ১৫ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ পর্ষদ কার্যনির্বাহী সংসদে এ হার প্রায় ১৯ শতাংশ। নির্ধারিত ২০২০ সালের মধ্যে সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্য পূরণে আওয়ামী লীগ সক্ষম হবে বলে আশা করে দল।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার সরকার বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ২০০৯ সাল থেকে টানা প্রায় ১১ বছরে তার নেতৃত্বে দেশে নারীর অবস্থান মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। শেখ হাসিনাই প্রথম নারীনীতি প্রণয়ন করেন। বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম লেখার আইন কার্যকর করে তার সরকার। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশ নেওয়া নিশ্চিত করার বহুমুখী পদক্ষেপও নেয় তার সরকার। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘গ্লোবাল উইম্যানস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় নারীদের গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। আমাদের কমিটির দিকে তাকালেই সে চিত্র আপনারা দেখতে পাবেন। আগামীতেও এর ব্যত্যয় হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর