শেখ মণি: বঙ্গবন্ধুর পরীক্ষিত রাজনৈতিক সহচর

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 21:48:50

মাত্র ৩৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে ধুমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। বাংলার স্বাধীকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান স্মরণীয়। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী সময়কালের যুব রাজনীতির পুরোধা। শেখ মণি নামে তিনি সুপরিচিত ছিলেন সমগ্র বাংলাদেশের আপামর মানুষের কাছে।      

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির ৮০তম জন্মদিন আজ (বুধবার)।

১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম সামছুন্নেছা আরা আরজু মণিকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পারিবারিক-রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে নিশ্চিত করার নিষ্ঠুর আঘাতে প্রাণ হারান তাঁরা। 

শেখ ফজলুল হক মনি ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৬০ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ষাটের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সাহসী নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। দেশমাতৃকার মুক্তির প্রত্যয়ে সশস্ত্র যোদ্ধাদল নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।   

শেখ ফজলুল হক মণির রাজনৈতিক জীবন ঘটনাবহুল। তিনি ১৯৬২-৬৩ সালের মেয়াদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের দোসর মোনায়েম সরকার তাঁর সংগ্রামী ভূমিকার কারণে তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। কিন্তু অদম্য এই নেতা তারপরেও অকুতোভয়ে পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে থাকেন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত রণাঙ্গনে পালন করেন সাহসী ভূমিকা।     

সাংবাদিকতায় শেখ মণি রেখেছেন স্মরণীয় অবদান। তিনি দৈনিক বাংলার বাণী, বাংলাদেশ টাইমস এবং বিনোদন পত্রিকা সাপ্তাহিক সিনেমার সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে আধুনিক সাংবাদিকতার সূচনালগ্নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। 

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়  যুব রাজনীতির সূচনা করেন শেখ মণি। যুবলীগের মাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম কাণ্ডারীতে পরিণত হন তিনি। তাঁর মধ্যে বিচ্ছুরিত হয় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিকে দমিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধু-পরিবারের সঙ্গে এই অপার সম্ভাবনাময় যুবনেতাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ১৫ আগস্টের কলংকিত রাতে।

কিন্তু মৃত্যুতেই নিঃশেষ হননি মুজিব-আদর্শের এই শঙ্কাহীন রাজনৈতিক সিপাহসালার। তাঁর তৈরি যুবলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে বঙ্গবন্ধু-কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তাঁর রক্ত ও রাজনীতির বিশ্বস্ত উত্তরাধিকার হয়ে এগিয়ে এসেছেন দুই পুত্র শেখ পরশ ও শেখ তাপস।

বঙ্গবন্ধুর পরীক্ষিত রাজনৈতিক সহচর হয়ে শেখ মণি যেভাবে জীবনের শেষ পর্যন্ত অটল ছিলেন, তাঁর দুই উত্তরাধিকারও বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল। শেখ পরশ পিতার তৈরি যুবলীগের শীর্ষ নেতা হিসাবে আর শেখ তাপস সংসদ সদস্য  হিসাবে মুজিবাদর্শে কাজ করে চলেছে। আর এভাবেই মৃত্যুর পরেও শেখ মণি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনিঃশেষ শিখায় স্মরণীয় হয়ে আছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর