প্রায় ১৩ বছর হলো ক্ষমতার বাইরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটিকে জন্মের পর এতদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়নি। সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামল থেকে শুরু করে বর্তমান আওয়ামী লীগের টানা তিনবার সরকার চলাকালে নানা দমন-পীড়নের সম্মুখীন হতে হয়েছে দলটিকে।
দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকে হামলা-মামলার বেড়াজালে আটকা পড়ে জনসম্পৃক্ত রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছে বিএনপি। এমন অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে। সম্প্রতি সময়ে জনসম্পৃক্ত রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে দলটি।
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার প্রধান পন্থা হচ্ছে নির্বাচন। বর্তমান সময়ে নির্বাচন ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কাছাকাছি। আপাতত সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করতে পারছে না বিএনপি। যার ফলে ভোটের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে আইনি প্রক্রিয়ায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তির আশাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। একের পর এক জামিনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন আন্দোলনই একমত্র পথ বলে ভাবছে বিএনপি। যা বিভিন্ন সময়ে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে একাধিকবার উঠে এসেছে।
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দ্রুত সময়ে জনগণকে সংগঠিত করে রাজপথের আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।
আন্দোলনের জন্য শুধু দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে মাঠে নামতে চায় না বিএনপি। নেতাকর্মীসহ জনগণকে একত্র করে মাঠে নামতে চায়। এ জন্য জনসম্পৃক্ত রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে দলটি। এর অংশ হিসেবে বেশ কিছু কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির বিস্তারিত জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠি নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে চিঠিটি পৌঁছে দেন। সরকারের পক্ষ থেকে চিঠির জবাব না পাওয়ায় চুক্তির বিষয়ে জানতে তথ্য অধিকার আইনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
এদিকে ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিক তালিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি মনে করছে রোহিঙ্গাদের যেভাবে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই একইভাবে যদি আসামে বসবাস করা মুসলিমদের বাংলাদেশের ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তা কোনভাবেই বাংলাদেশ গ্রহণ করতে পারবে না। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে আগামী ৭ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে জনগণের সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আগামী ১০ ডিসেম্বর দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে র্যা লি করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি। বাজারের নানা অসংগতি তুলে ধরেছে তারা। দলীয় সিন্ডিকেটের কারণে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রত্যেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ব্যাখ্যাও চেয়েছে বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গত ২৮ নভেম্বর রাজধানীর ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অডিটোরিয়ামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রস্তাবিত পাইকারি বিদ্যুতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর শুনানিতে এ ব্যাখ্যা চান।
বিদ্যুতের দাম বাড়লে কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।