পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে জিএম কাদেরের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা | 2023-12-11 17:22:27

জাতীয় ছাত্র সমাজের পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র সমাজ নেতারা।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে কয়েক মিনিটের জন্য এমন বিক্ষোভ করেন তারা।

এদিন জিএম কাদের বনানীস্থ পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আসেন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে। এসে সোজা উঠে যান দ্বিতীয়তলায় নিজ কক্ষে। ভেতরে বসে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছিলেন। সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতিও তখন পার্টির চেয়ারম্যানের কক্ষে।

দুপুর দেড়টার দিকে জাতীয় ছাত্র সমাজের জনা ত্রিশেক কর্মী জিএম কাদেরর কক্ষের সামনে এসে ‘এই মুহূর্তে কমিটি দিতে হবে, দিতে হবে’, ‘অবিলম্বে কমিটি দিয়ে দাও, দিতে হবে’, ‘কমিটি নিয়ে টালবাহনা করতে দেওয়া হবে না’- এসব স্লোগান দিতে থাকেন।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে ছাত্র নেতারা বিভিন্ন স্লোগান দেন

এসময় একজন উত্তেজিত কর্মী সিঁড়ির দরজাতে সজোরে ঘুষি দিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের নিবৃত করতে ব্যর্থ হন জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. নোমান।

মিনিট দশেক পরে চেয়ারম্যানের কক্ষ থেকে বের হন জাতীয় পার্টির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসান। তিনি ধমক দিয়ে সরে যেতে বলেন। তার সামনে চরম ক্ষোভ দেখান কয়েকজন ছাত্র। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্র সমাজের সদস্য সচিব অর্নব চৌধুরী।

অর্নব চৌধুরী বলতে থাকেন, কমিটি দিচ্ছেন না। আমাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। পার্টির জন্য কি করি নাই। আমাদের নিয়ে তামাশা চলছে। এভাবে উচ্চস্বরে বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে যান।

দীর্ঘ ৫ বছর পর ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ছাত্র সমাজের কাউন্সিল। এর দশ দিনের মাথায় ২৩ নভেম্বর ইব্রাহিম খান জুয়েলকে সভাপতি ও আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটির ১৩ পদে নাম মনোনয়ন দেওয়া হয়। কথা ছিল ঘোষিত নেতারা সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া উপস্থাপন করবে। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত বসতেই পারেননি। এরই মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির সুর লক্ষ্য করা গেছে সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে।

জিএম কাদেরের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করা হয়

পার্টির চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ছাত্র সমাজ সভাপতি ইব্রাহিম খান জুয়েল বার্তা২৪.কমকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ। তারাই স্লোগান দিয়েছে। তারা চায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হোক।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন দেওয়া হয়নি, চেয়ারম্যানতো কমিটি তৈরি করবে না। আপনারা রেডি করে উপস্থাপন করবেন তার অনুমোদন দেওয়ার কথা- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এক সঙ্গে বসাই গেল না। কমিটি করবো কিভাবে।

আলাপাকালে তিনি আকারে ইঙ্গিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার পেছনে কিছুটা দোষ সাধারণ সম্পাদকের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন।

বিক্ষোভ প্রসঙ্গে ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আসলে এটাকে বিক্ষোভ বলা যাবে না। ওরা কমিটি চেয়ে স্লোগান দিয়েছে। আমরাতো প্রতিদিনেই পার্টি অফিসে আসি। শীর্ষনেতাদের আগমনের সময় স্লোগান দিয়ে অভিনন্দন জানাই। আজকের স্লোগান অনেকটা তেমনি।

দুপুরে কয়েক মিনিটের জন্য বিক্ষোভ করেন ছাত্র সমাজ নেতারা

তিনি বলেন, আজ (১৮ ডিসেম্বর) অলরেডি মহাসচিব একটি ক্রাইটেরিয়া চূড়ান্ত করে দিয়েছেন। বয়স ৩৫ এর বেশি হতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ৭০ শতাংশ, জেলা ও অন্যান্য কমিটি থেকে থাকবে ৩০ শতাংশ নেতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও এনআইডির ফটোকপি জমা নেওয়া হবে। এর আগে আমরা ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিভি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম অনেক সিভি জমা হয়েছে।

ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, সাবেক ছাত্রনেতা শাহ ই আযম, বিদায়ী কমিটির সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসান, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন, সদস্য সচিব ফয়সাল দিদার দীপু ও বর্তমান কমিটির সভাপতি, সম্পাদককে একত্রে বসে কমিটির খসড়া উপস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্র সমাজের কমিটির আকার ১২১ সদস্য বিশিষ্ট হওয়ার কথা। কিন্তু এর আকার নিয়ে এখন টানা হেচড়া চলছে। কেউ কেউ ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের মতামত দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর