আওয়ামী লীগের সম্মেলন, প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 10:30:50

রাত পোহালেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দলটির প্রথম অধিবেশনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে দলের সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। নবীনদের জন্য সেখানে থাকছে সম্ভাবনাময় আগামীর বার্তা।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের সম্মেলন তেমন জাঁকজমকপূর্ণ হবে না বলে দলীয় নেতারা জানালেও ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন সাজ সাজ রব।

সম্মেলনস্থলের নজরকাড়া সাজসজ্জা ও আলোর ঝলকানি, বিশাল বিশাল বিলবোর্ড, এলইডি বোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন, বেলুনের সাজসজ্জাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা যে কারো নজর কাড়বে।

চলছে ফিনিশিং টাচ, ছবি: সুমন শেখ

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, সম্মেলনের প্রস্তুতি ঘিরে ব্যস্ত সংশ্লিষ্ট সবাই। চলছে ফিনিশিং টাচ। কোনো দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই। কয়েকশ’ শ্রমিক টানা তিন সপ্তাহ ধরে মঞ্চ ও মাঠ সাজাচ্ছেন। কেউ ব্যস্ত বিশাল প্যান্ডেলের নিচে কয়েক হাজার চেয়ার বসাতে, কারো ব্যস্ততা লাইট ফ্যান চেক করাতে, কেউ বা ব্যস্ত রং তুলি নিয়ে।

নৌকার আদলে তৈরি মূল মঞ্চের সামনের বিশাল প্যান্ডেলের কার্নিশ সাজানো হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন অর্জনের চিত্র দিয়ে। মূল মঞ্চের ডান পাশে সামনে একটি ছোট মঞ্চ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে।

বিশাল এ কর্মযজ্ঞের তদারকিতে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দফায় দফায় তাদের পরিদর্শন, দিক নির্দেশনা ও পরামর্শে সাজানো হয়েছে উদ্যান।

মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক এবং দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আশা করি, এবারের সম্মেলনে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জমায়েত হবে। তাই আমরাও চেষ্টা করেছি সাধ্যমত আয়োজন করতে। সাজসজ্জায় আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও আমাদের নেত্রীর অর্জনগুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। সম্মেলনে আসা কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের জন্য শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের ব্যবস্থাও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে মূল মঞ্চ, ছবি: সুমন শেখ

পাল তোলা নৌকায় মূল মঞ্চ

এবারের সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ মূল মঞ্চ। ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চটি নৌকার আদলে তৈরি। মঞ্চের পেছনের ‘জায়ান্ট ব্যানারে’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি ছাড়াও ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় চার নেতা- তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম এ মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামারুজ্জামানের ছবি। এছাড়া আছে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম চার নেতা- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ছবি।

মঞ্চের সামনে রয়েছে বাঙালির গৌরব ও অহংকার পদ্মাসেতুর রেপ্লিকা। তাতে রয়েছে খরস্রোতা পদ্মার বুকে ৪০টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটির সামনের বিশাল জলরাশিতে ভেসে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। এক পাশে জেগে ওঠা চরে রাখা হয়েছে কাশবন। এর মধ্যে নোঙর করে রাখা হয়েছে বিশালাকার একটি পাল তোলা নৌকা। তাতে আবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি।

সম্মেলন মঞ্চে রয়েছে পদ্মা সেতুর রেপ্লিকা, ছবি: সুমন শেখ

৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ শূন্য থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ার দেওয়া হবে। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান।

প্যান্ডেলের সামনে বাম পাশে রয়েছে আরেকটি নৌকা। অপেক্ষাকৃত ছোট সে নৌকায় দাঁড়িয়ে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

সম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এরই মধ্যেই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ভেন্যুতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। মূল মঞ্চ ও এর আশেপাশের নিরাপত্তা তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া সম্মেলনের দিন ভেন্যুতে আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন।

নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি গেট থাকবে। শিখা চিরন্তনী গেটটি ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

সম্মেলনস্থল প্রস্তুত করতে তদারকি করছেন নেতারা, ছবি: সুমন শেখ

সিআরআইয়ের ভিন্ন আয়োজন

আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের হাজির হয়েছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথ চলার বিভিন্ন ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে ১০টি স্থাপনা প্রদর্শন করছে তারা। যা সম্মেলনের জৌলুস আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

১০টি স্থাপনা হলো-‘ওয়াক উইথ দ্যা লিডার’, ‘রোড টু টোয়েন্টিফার্স্ট কাউন্সিল’, ‘লাইট আফটার ডার্কনেস’, ‘ফেইস অফ এএলবিডি’, ‘এএলবিডি রিজিওনাল ফুটপ্রিন্টস’, ‘এলবিডি-ইনফ্রন্ট অফ আ মিরর’, ‘কুওটস ফর ফিউচার লিডারশিপ’, ‘আ নিউ ইরা-পার্ট ওয়ান’ এবং ‘আ নিউ ইরা-পার্ট টু’।

এছাড়া ‘তারুণ্যের ভাবনায় বাংলাদেশের রাজনীতি’ নামে একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হবে সিআরআইয়ের পক্ষ থেকে। ২৫০ জন তরুণ-তরুণীর অংশগ্রহণে কাউন্সিলের প্রথম দিন অনুষ্ঠানটি সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে।

চলছে ফিনিশিং টাচ, ছবি: সুমন শেখ

থাকছেন না কোনো বিদেশি অতিথি

সামনে মুজিববর্ষ। তখন অনেক বিদেশিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এজন্য আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে বিদেশি কোনো অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ অন্যসব পেশার বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে অতিথিদের তালিকা তৈরি করে সম্মেলনের কার্ড পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গণমাধ্যম ও সিনিয়র সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানোর তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি।

দলটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম জানান, বিমানবন্দর, বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনসহ ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে বিলবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে অতিথি ও কাউন্সিলরদের স্বাগত জানানো হবে। সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

পাটের ব্যাগে উপহার

সম্মেলনে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের পাটের ব্যাগে উপহার দেওয়া হবে। এতে থাকবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তার তালিকা সম্বলিত একটি কার্ড থাকবে। একই সঙ্গে থাকবে দু’টি সিডি। একটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অন্যটিতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র, একটি প্যাড ও একটি কলম থাকবে পাটের ব্যাগে।

সম্মেলনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ২৫ হাজার পাটের ব্যাগ বিতরণ করা হবে জানিয়ে দলের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, প্রতিটি ব্যাগে আওয়ামী লীগের ইতিহাস সম্বলিত স্মরণিকা, শোকপ্রস্তাব, দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভাষণ এবং গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র থাকবে। এছাড়া সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেড়শ’ আলোকচিত্র সম্বলিত একটি অ্যালবামও দেওয়া হবে।

এছাড়া ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ওয়েব পেজ উদ্বোধন করেছে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি। ওয়েব পেজের ভিডিও অংশে সম্মেলন লাইভ দেখানো হবে।

চলছে ফিনিশিং টাচ, ছবি: সুমন শেখ

নৃত্য পরিবেশনায় শিবলী-নীপা

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে দেশ বরেণ্য শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ সময় নাচ পরিবেশন করবেন শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নীপা।

সাংস্কৃতিক পর্বে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা গান গাইবেন। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো ‘থিম সং’ থাকছে না। আধা ঘণ্টার মতো হতে পারে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

মোরগ-পোলাও দিয়ে আপ্যায়ন

সম্মেলনের প্রথম দিন ২০ ডিসেম্বর ৫০ হাজার নেতাকর্মীর দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। খাবারের ব্যাগে থাকবে মোরগ-পোলাওয়ের সঙ্গে একটি করে ডিম, ফিরনি ও একটি পানির বোতল। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগতভাবেও খাবারের আয়োজন থাকবে।

সম্মেলন উপলক্ষে ১০০ চিকিৎসক নিয়ে ১২টির মতো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করছে স্বাস্থ্য উপকমিটি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর