আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনা পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ওবায়দুল কাদের। ২১ তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য এই দায়িত্ব পেলেন শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের।
এ নিয়ে টানা নবম বারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সাল থেকে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন। ৩৮ বছর ধরে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে এর আগে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত ২১তম কাউন্সিলে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
কাউন্সিলে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন সভাপতিমণ্ডলির সদস্য আব্দুল মতিন খসরু। এ সময় তার প্রস্তাব সমর্থন করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। সর্বসম্মতিক্রমে ৩ বছরের জন্য সভাপতি পদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করেন।
এর আগে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ সময় তার প্রস্তাব সমর্থন করেন বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান। পরে সর্বসম্মতিক্রমে তা পাস করেন কাউন্সিলররা।
অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্ব ড. মশিউর রহমান ও প্রফেসর সাইদুর রহমানের গঠিত কমিশন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এক নজরে শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদের:
শেখ হাসিনা:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রসংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৯৬ সালের ২৩ জুন তিনি প্রথম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তার নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সে বছরের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হন তিনি। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যগুলোর মধ্য ছিল- ভারতের সঙ্গে সাথে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন। ২০০৯-২০১৯ সাল পর্যন্ত এক দশকে প্রবৃদ্ধি অর্জন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করাসহ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
ওবায়দুল কাদের:
নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন ওবায়দুল কাদের। বাবা মোশারফ হোসেন ছিলেন শিক্ষক। বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করেন ওবায়দুল কাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন তিনি।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কাদের। ৬৬'র ৬ দফা আন্দোলন এবং ৬৯ এর গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কারাবরণ করেন। ১৯৭৫ এর পর দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুইবার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। রচনা করেছেন আটটি গ্রন্থ। ওবায়দুল কাদের ৯৬'র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী ৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২-২০০৯ এর সম্মেলন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পুনরায় দ্বিতীয়বারের মত নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।