এরশাদ বিহীন জাপার শঙ্কা চ্যালেঞ্জের কাউন্সিল

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 10:21:30

এরশাদ বিহীন জাতীয় পার্টির প্রথম কাউন্সিল শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত হলেও নতুন নেতৃত্ব বিশেষ করে চেয়ারম্যান মহাসচিব নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছে নেতাকর্মীরা।

যদিও এরশাদ জীবদ্দশায় পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের’র নাম ঘোষণা করে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণার সাংগঠনিক আদেশে এরশাদ বলে গেছেন আমার মৃত্যুর পর কাউন্সিলররা যেনো জিএম কাদেরকেই পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন।

যদিও সেই আদেশের পর অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন এরশাদ। একবার ঘোষণা দিয়েও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে রংপুরের নেতাদের আন্দোলনের মুখে ছোটো ভাই জিএম কাদেরকে দ্বিতীয় দফায় ভারপ্রাপ্ত ও ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি রওশন পন্থীরা। এরশাদের মৃত্যুর পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার মনোনয়ন প্রশ্নে দ্বন্দ্ব প্রকাশ হয়ে পড়ে। জিএম কাদের ও রওশন দু’জনেই বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ার নিয়ে টানাটানি শুরু করেন। অবশেষে জয়ী হন রওশন। জিএম কাদেরকে উপনেতা পদ পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। প্রকাশ্য গ্রুপিং না থাকলেও ভেতর ভেতর একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজমান। কয়েকজন সিনিয়র নেতা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রওশনকে চেয়ারম্যান পদে বসানোর জন্য। জনশ্রুতি রয়েছে রওশন নিজেই নাকি এতে আগ্রহী না।

এমন পরিস্থিতিতে ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও সংখ্যাধিক্য নেতাকর্মী জিএম কাদেরের পক্ষে একাট্টা। তারা জিএম কাদেরকেই চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান। তবে রওশন যদি বেঁকে বসেন তাহলে কাউন্সিলে বিশৃঙ্খলার যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। রওশন পন্থী গুটি কয়েক সিনিয়র নেতা ঘোট পাকাতে পারেন এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

কৌশল হিসেবে কাউন্সিলে শো-ডাউন থেকে সরে এসেছে জাতীয় পার্টি। শুধুমাত্র ৮ হাজার কাউন্সিলর-ডেলিগেডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন জিএম কাদের।

পাশাপাশি মহাসচিব পদ নিয়ে জটিলতায় জড়াতে চায় না জাপা। কাউন্সিলের মহাসচিব পদ ঘোষণা না দিয়ে পরে দিতে চায়। যাতে কোনো প্রার্থী লোকজন এনে শো-ডাউন করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি না করে।

১৯৮৫ সালের ১৬ই আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে নিয়ে জাতীয় ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিলো। জোটের শরীক ছিলেন জনদল, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টি, বিএনপি (শাহ) মুসলিম লীগ (সা)। জাতীয় ফ্রন্ট গঠনের ৪ মাস ১৪ দিনের মাথায় (১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি) ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে জাতীয় পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। শরীক দলের নেতারা তাদের নিজেদের দল বিলুপ্ত করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

নবগঠিত পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব নিযুক্ত হন অধ্যাপক এমএ মতিন। পার্টির কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত-জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ার জাহিদ। ২১ প্রেসিডিয়ামসহ ৬০১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়।

জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই এরশাদকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়ে আসছে। দু’একবার যারাই এরশাদের সিদ্ধান্তে দ্বিমত করতে গেছেন তাদের দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক নেতা একাধিক দফায় শোকজ নোটিশ পেয়েছেন বা সাময়িক বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন। শোকজের ক্ষেত্রে এরশাদ ছাড় দেননি আপন ভাই জিএম কাদের ও সহধর্মিণী বেগম রওশন এরশাদকেও।

নানা কারণে জাতীয় পার্টির মতো আর কোনো রাজনৈতিক দল সম্ভবত এতো বেশি দফায় ভাঙনের শিকার হয়নি। জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে গিয়ে প্রথম পৃথক জাতীয় পার্টি (মিম) গঠন করেন মিজানুর রহমান ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। দ্বিতীয় দফায় ভাঙনের শিকার হয় নাজিউর রহমান মঞ্জু ও কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে। সর্বশেষ পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদ। বর্তমানে জাতীয় পার্টি, জাপা, জেপি, বিজেপি ও জাপা (জাফর) নামে ৪টি ধারা বিদ্যমান।

চারটি খণ্ডিত অংশের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় পার্টি (জেপি) আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অপর দুই অংশ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও জাতীয় পার্টি (জাফর) বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যুক্ত।

বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। জোট থেকে ২৬টি আসন দেওয়া হয়। আর ১৪৬টি আসন রাখা হয় উন্মুক্ত। জোটগত আসনে ২১টি, উন্মুক্ত ১টি নিয়ে মোট ২২টি আসনে বিজয়ী হয় এরশাদের প্রার্থীরা। সংসদে মহিলা এমপির সংখ্যা তাদের ৪জন। ২৬ আসন নিয়ে বিরোধীদলের চেয়ার অলংকৃত করে আসছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর