ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে। সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ইভিএম পুড়িয়ে হরতাল পালন করে দলটির নেতাকর্মীরা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় নেতাকর্মীদের সাথে যোগ দেয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় প্রতীকী ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে আসেন ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্বের অংশ হিসেবে মাঠে রয়েছে বিজিবিও।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, হরতাল গণতন্ত্রের অন্যতম অস্ত্র। গণতন্ত্রের এই অস্ত্রের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দাবি আদায় করবো। হরতাল মানে কোনো বিধ্বংসী কাজ নয়, হরতাল মানে আগুন দিয়ে পোড়ানো নয়। হরতাল হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা মানুষকে বলবো গাড়ি চালাবেন না, আপনারা দোকানপাট খুলবেন না। বিশ্বে অন্য নেতারাও এই হরতালের কথা বলেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটাকে ভিন্নখাতে চিহ্নিত করেছেন, আমরা ঐ খাতে যাব না। আমরা শান্তি অস্ত্র প্রয়োগ করব। আমাদের এখানে যত নেতাকর্মী আছে প্রত্যেককেই শান্তিপ্রিয়। আমরা গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্রয়োজনে নিজের শার্টের বোতাম খুলে গুলি বরণ করব। তবু অশান্তি সৃষ্টি করবো না। আমাদের রক্ত ঝরবে কিন্তু আমরা অন্য কারো রক্ত ঝরাবো না।
এরপর, রুহুল কবির রিজভী বিক্ষোভ কর্মসূচির বিরতি ঘোষণা করেন। বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা নাগাদ আবারও এই কর্মসূচি চলবে।
এর আগে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। তারা পুলিশ, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।
মতিঝিল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, আসলে আজ ওয়ার্কিং ডে। ওয়ার্কিং ডে তে হরতালের কোনো অনুমতি নেই। হরতাল করে তারা গাড়ি ভাংচুর করবে তা গ্রহণযোগ্য না। এখানে যাতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। অতিতে আমরা দেখেছি তারা গাড়ি ভাংচুর করেছে। দেখা যায় প্রথমে তারা অল্প সংখ্যক লোক থাকে, ধীরে ধীরে লোকসংখ্যা বাড়ে। শেষে গাড়ি ভাংচুর করে, গাড়িতে আগুন দেয়।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ বাঁধা দিতে পারে নাকি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচী বলতে হরতাল করে তো গাড়ি ভাংচুর করতে পারবে না।
সকাল থেকেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী।