উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে জাপায় ক্ষোভ

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 20:53:56

তিনটি সংসদীয় আসনের (গাইবান্ধা-৩, বাগেরহাট-৪ ও ঢাকা-১০) উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। দু’জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে প্রার্থী হায়ার করে এনে।

যার একজন সম্প্রতি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন। আরেকজনের যোগদানের বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারে নি। এমনকি প্রার্থী নিজেও বলতে পারেননি তিনি পার্টিতে কি পদে আছেন।

জাতীয় পার্টিতে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে পার্টি করে একজন আর মনোনয়ন দেওয়া হয় আরেকজনকে। যদিও ভাড়াটিয়া এসব নেতাদের কমজনেই নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টিতে সক্রিয় থেকেছেন। ভোটের পর বেশিরভাগ নেতাই আবার বাতাসে মিলিয়ে গেছেন। আবার সক্রিয়রা মনোনয়ন না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়েছেন। এভাবে দিনে দিনে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে জাপা।

অনেকে ভোটের পর পার্টির নেতাদের গালমন্দ করে বিদায় নিয়েছেন। সবচেয়ে ন্যক্কার জনক ঘটনা ঘটেছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। ওই নির্বাচনের পূর্বে মশফিকুর রহমানকে হায়ার করে এনে পার্টির প্রার্থী করা হয়। তিনি নির্বাচনের কিছুদিন পূর্বে ঢাকায় এসে জাপায় যোগদান করেন। সেই সভাতেই প্রয়াত এরশাদ মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। স্থানীয় নেতারা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

পরে জামানত খুইয়ে লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করে জাপার ওই প্রার্থী। নির্বাচনের পরে কখনই পার্টিতে দেখা যায় নি তাকে। একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছিলেন মশফিকুর রহমান। হায়ারিং প্রার্থী যেমন নিষ্ক্রিয় থেকেছেন তেমনি ত্যাগীরাও জাপার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেছেন।

অনেকেই ভেবেছিলেন জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার পর দীর্ঘদিনের এই রেওয়াজ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং ক্ষেত্র বিশেষে বেড়ে গেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও মেয়র প্রার্থী করা হয়েছিল প্রার্থী হায়ার করে এনে। যদি সেই প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াতেই বাতিল হয়ে যান। এর আগেও উত্তর সিটি করপোরেশনে হায়ার করে প্রার্থী করা হয়েছিল ব্যান্ড শিল্পী শাফিন আহমেদকে। ভোটের পরে তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি।

গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হায়ার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। গাইবান্ধা-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি প্রয়াত ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর সন্তানকে। ফজলে রাব্বী জাতীয় পার্টির টিকেটে কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০১৪ সালে এরশাদ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দেন। এই ক্ষোভে কাজী জাফর আহমেদ’র সঙ্গে গিয়ে পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন ফজলে রাব্বী চৌধুরী। ওই সময় জাপা নেতারা অনেকেই কষ্ট পেয়েছিলেন। তার সন্তান মইনুর রাব্বী চৌধুরী জাতীয় পার্টিতে ফেরায় কিছুটা যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন।

কিন্তু বেশি আপত্তি উঠেছে বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী নিয়ে। এখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিস্ত্রীকে। যাকে পার্টির কেউই চেনেন না। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, আমি মনে হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। পাল্টা প্রশ্ন ছিল নতুন কমিটি না-কি বিদায়ী কমিটিতে ছিলেন।

এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন এটা সুনীল দা (জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জিএম কাদের’র প্রেস সেক্রেটারি সুনীল শুভরায়) ভালো বলতে পারবেন। আপনার নিজের পদ নিজে জানেন না! এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন সাজন কুমার মিস্ত্রী।

এই আসনে বাগেরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাবিবুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই পার্টির সঙ্গে রয়েছেন। জাপায় যোগদানের পূর্বে জেলা আওয়ামী লীগের ট্রেজারার ছিলেন। তাকে মনোনয়ন না দিয়ে অপরিচিত এমন একজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জিএম কাদের’র বিচক্ষণতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

বাগেরহাট জেলা জাতীয় পার্টির নেতা ও কৃষক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শেখ হুমায়ুন কবীর বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আমরা তাকে চিনি না। এটা রিভিউ করা না হলে ভালো ফল আশা করা কঠিন। এতে পার্টির ক্ষতি হবে।

জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিষয়টি ঠিক হলো না। এভাবে পার্টির ক্ষতি করা হচ্ছে। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখন বুঝতে পারছেন না। তাকে তার কাছের লোকজনেই ডুবাবে। ওনি সিন্ডিকেট মুক্ত হতে না পারলে পার্টিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

নিজের পরিণতির কথা ভেবে প্রকাশ্য মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে অনেকেই এই সিদ্ধান্ত যথাযথ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর