উদ্ভূত করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ মানুষের জন্য পাড়া-মহল্লায় লঙ্গরখানা খোলার দাবি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন।
রোববার (৫ এপ্রিল) গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল এক যুক্ত বিবৃতিতে দাবি জানান।
করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার প্রেক্ষিতে গণসংহতির নেতারা বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের মাত্রা যখন ব্যাপকতর হচ্ছে তখন প্রধানমন্ত্রী আজ যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেশের দিনমজুর-শ্রমজীবী-অনাহারী-দুস্থ মানুষদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন বাজেট ঘোষণা করেননি। প্রধানমন্ত্রী দেশের বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বিভিন্ন আর্থিক সহায়তার কথা উল্লেখ করলেও লকডাউনের কারণে কর্মহীন-দুস্থ মানুষদের জন্য তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তার জন্য কার্যকর কোন উদ্যোগের কথা বলেননি।
১০ টাকা কেজি চাল, ভিজিএফ কার্ড, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি কর্মসূচির উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী তার আগের বক্তব্যেও করেছিলেন। কিন্তু আমরা গত কয়েকদিন ধরে দেশের মানুষের খাবারের জন্য হাহাকারের চিত্র দেখছি এবং বিভিন্ন জায়গায় সরকারি ত্রাণ বিতরণের দুর্নীতি ও ব্যাপক অব্যাবস্থাপনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমরা দেখছি, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি চাল গরিব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, বরং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও ডিলারদের ব্যক্তিগত গুদামে পাওয়া যাচ্ছে, বলেন গণসংহতির নেতারা।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্বই যেখানে সবচাইতে জরুরি, তখন দেখা যাচ্ছে গরিব-কর্মহীন-দিনমজুর-শ্রমজীবী মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে জটলা পাকিয়ে ত্রাণের প্রতীক্ষায় আছে। আবার যেখানে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে, অপ্রতুলতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেখানেও মানুষের ঠাসাঠাসি-কাড়াকাড়ি-অপ্রাপ্তির অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই নেই। ফলে একদিকে যেমন মানুষ অনাহারে দিনাতিপাত করছে অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশের ৪৪ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল বলেন, শুরু থেকেই সরকার ও গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিকদের সাথে অন্যায় ও অমানবিক আচরণ করে আসছে। দেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন সরকার ৪৪ লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিজিএমইএ-বিকেএমিএ’র ওপর ছেড়ে দিয়েছে। সরকারের এই অনৈতিক ও চাতুরিপূর্ণ কৌশলের কারণে শ্রমিকরা আজ কারোনার বাহক হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে মানবেতর ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গণসংহতি আন্দোলনের দাবিসমূহ:
অবিলম্বে দুস্থ-দিনমজুর-শ্রমজীবী মানুষদের খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে বিশেষ খাদ্য বাজেট ঘোষণা করা।
সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী গবিরব মানুষদের কাছে পৌঁছানোর জন্য দুর্নীতিমুক্ত ও কার্যকর বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সারাদেশের সকল ইউনিয়নও ওয়ার্ডের পাড়ায়-মহল্লায় লঙ্গরখানা খোলা।
গরিব-দুস্থদের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুইবেলা খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা। যাতে করে মানুষ অভুক্ত না থেকে বাড়িতে অবস্থান করতে পারে।
দেশের সকল জেলায় করোনা রোগীদের জন্য বিশেষ অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করা। ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করার পাশাপাশি তাদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি ভাতা ও বিমার ব্যবস্থা করা।