করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা লক্ষ্যণীয়। তবে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতাসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদের কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তাদের দলীয় কার্যক্রম।
মহামারি করোনার কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ। কর্মহীন এসব মানুষের পাশে সরকার সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগেও প্রশংসনীয় ত্রাণ কার্যক্রম দৃশ্যমান।
কিন্তু জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের দেখা মিলছে না মাঠে-ময়দানে। দু’টি বিবৃতি দিয়ে নিজের দায় সেরেছেন তিনি। টানা ছয় বছর ধরে বিরোধীদলীয় নেতার গদিতে আসীন এ নেতার ভূমিকায় সাধারণ জনগণ চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা ভেবেছিলেন, জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে বিত্তশালী এ নেতা জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন। সে আশায় গুড়ে বালি। তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
একইভাবে নির্বাচন এলেই যাদের মুখে কথার ফুলঝুঁড়ি ফোটে, সেই নেতারাও অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। সরকারের বাইরে থাকা সবচেয়ে বৃহৎজোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন এ পর্যন্ত ছয় লাইনের দু’টি বিবৃতি দিয়ে নিজের দায় সেরেছেন। তার নিজের দল গণফোরামের দেখা মিলছে না মাঠে।
গণফোরাম নেতা ড. রেজা কিবরিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, না আমরা দল থেকে কিছু করছি না। এটা সরকার করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দলের প্রতিটা নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের নিরাপদে থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছি। অন্তত ৩৫টি স্পটে আমরা ত্রাণ দিয়েছি। আমরা মিডিয়ায় দেখানোর জন্য কাজ করি না। হাদিসেই আছে বাম হাত কি দিল, ডান হাত জানবে না। অতএব আমরা ত্রাণ দেওয়ার ছবি দেই না।
দলীয় কোন্দলের কারণে গত অক্টোবর মাস থেকে নিজ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ড. কামাল। কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশের দখলে রয়েছে। এ অংশটিরও তেমন ত্রাণ তৎপরতা নেই। মার্চে ১৩শ’ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করে হাত গুটিয়ে বসে আছেন তারা।
প্রয়াত এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি এখন চারটি ধারায় বিরাজমান। এর মধ্যে দু’টি ধারা সরকারের সঙ্গে রয়েছে, দু’টি ধারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের আসনে থাকা মূলধারার কিছুটা কার্যক্রম দৃশ্যমান। এ ধারার নেতা জিএম কাদেরকে মাঝে মধ্যে দেখা যায় বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে। করোনা শুরু পর থেকেই দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে তাকে।
দলটির সংরক্ষিত চারজনসহ ২৬ জন সদস্য রয়েছেন জাতীয় সংসদে। এর মধ্যে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাদ এরশাদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও লিয়াকত হোসেন খোকাকে ত্রাণ বিতরণে সরব দেখা গেছে। অন্যদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। সীমিত পরিসরে ত্রাণ দিয়ে নিজের অবস্থা জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি (আন্দালিব রহমান পার্থ) দেশের দু’টি স্থানে সীমিত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জাতীয় পার্টির অপর দু’টি অংশের কোনো হদিসই মিলছে না।
আন্দলিব রহমান পার্থ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ত্রাণ দেওয়ার বিষয়টি আমি পাবলিকলি আনি না। মিডিয়ায় দেখানোর জন্য ত্রাণ দেই না। আমি শত শত ত্রাণ দিয়েছি। আমি মনে করি, এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। চাইলে আমি অনেক ছবি দেখাতে পারি।
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত। কোনো ধারাই প্রকৃত অর্থে সরব নয় মাঠে। সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তার অংশের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য শিরীন আখতার জাতীয় সংসদের ছয় মাসের বেতন ভাতা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন। এর বাইরে তাদের তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না। মাঝে মধ্যে বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জাসদের কার্যক্রমও দৃশ্যমান নয়। কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন উত্তরা এলাকায় কিছু ত্রাণ দিয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে তাও খুবই সীমিত পরিসরের। অনেকটা সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইনে) থাকার মতো অবস্থা হয়েছে দলটির। জাসদের তৃতীয়ধারার কোনো হদিস মিলছে না। মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর অংশটি ঝিমিয়ে পড়েছে। এ অংশের নেতা নাজমুল হক প্রধান গ্রামের বাড়িতে বিশ্রামে রয়েছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে নাগরিক ঐক্য ততটা খ্যাতি-জনপ্রিয়তা অর্জন করতে না পারলেও রাজনীতির মাঠে আলোচিত-সামালোচিত নাম মাহমুদুর রহমান মান্না। ডাকসুর সাবেক এ ভিপিকে সরব দেখা যায় বিভিন্ন সেমিনার ও গোলটেবিল আলোচনায়। করোনার কারণে এসব কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেলে তিনিও যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বা আমার সংগঠন থেকে অনেক কাজ করেছি। আরো অনেক করতে হবে। বিষয়টা মনে রাখতে হবে দুই কোটি মানুষ দিন আনে দিন খায়, ৭০ দিন লকডাউন চলছে। আমাদের এ সহায়তা সেখানে কিছুই না, তারপরও কিছু করছি। করোনা মোকাবিলায় সরকার দক্ষতা দেখাতে পারেনি। তারপরও বলব, যত তাড়াতাড়ি বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে, যত করোনা পরীক্ষা বাড়াতে পারে, ভালো।
সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত বিকল্প ধারারও একই অবস্থা। দলটির কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।