গণস্বাস্থ্যের কিটের অনুমোদনসহ ৭ দফা দাবিতে গণসংহতির বিক্ষোভ

বিবিধ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 14:01:26

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের অনুমোদন ও বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দসহ ৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে গণসংহতি আন্দোলন।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) বেলা ১২টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত পথসভা করেছে দলটি।

এ সভায় বক্তব্য রাখেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জান্নাতুল মরিয়ম তানিয়া এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন। সমাবেশ পরিচালনা করেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু।

পথসভা শেষ করে দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে একটি মিছিল তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন হয়ে সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয় এবং সেোনেই সমাপনী বক্তব্য দেন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

তিনি বলেন, ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। কিন্তু সরকার তখন গুরুত্বের সাথে নেয়নি। তাদের সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ ছিলো মুজিব শতবর্ষের কর্মসূচিকে ঘিরে। সরকারের চরিত্র যাই হোক না কেন, রাতের আঁধারে ক্ষমতায় আসলেও মহামারি মোকাবিলায় আমরা সরকারকে সহযোগিতায় প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের দল থেকে এবং জোট থেকে সর্বদলীয় পরামার্শ সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সকল দল অংশ নিলেও সরকারের কোন প্রতিনিধি আসেনি। সরকার যদি আগাম পদক্ষেপ নিত তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, ৪৯ দিনের একটি কার্যকর লকডাউন বাস্তবায়ন করা গেলে আজকে আমাদের এই পরিণতি হতো না। দিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের খাদ্য ও নগদ অর্থের চাহিদা মিটিয়ে একটি কার্যকর লকডাউন বাস্তবায়ন করলে এখন আমরা নিরাপদে মানষের জীবন ক্ষয় না করে অর্থনীতি খুলে দিতে পারতাম। সমস্ত রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২ কোটি পরিবারে ২ মাসের খাদ্য ও মাসে ন্যূনতম ৫ হাজার করে টাকা পৌঁছে দিতে আমাদের সাকুল্যে লাগতো ৪০ হাজার কোটি টাকা। বিনিময়ে আমরা পেতাম একটি কার্যকর লকডাউন। কিন্তু গত তিন মাসে সাধারণ ছুটির নামে সরকার যে নাটক করেছে তাতে প্রতিদিন ৩ হাজার কোটি করে প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হয়নি।

অবিলম্বে গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত করোনা পরীক্ষার কিটের অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানান জোনায়েদ সাকি।

তিনি আরো বলেন, এই মহামারির মধ্যেও যে বাজেট ঘোষণা করা হলো তা একেরাইে গতানুগতিক। স্বাস্থ্য খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কোন দিকনির্দেশনা এই বাজেটে নেই। বাজেটের দিকে তাকালেই বোঝা যায় সরকার নাগরিকদের চিকিৎসা ও জীবন রক্ষা নিয়ে কতটুকু উদ্বিগ্ন।

প্রস্তাবিত বাজেটকে সম্পূর্ণ রিভিউ করে অন্তত ২০ ভাগ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দাবি জানান জোনায়েদ সাকি।

গণসংহতি আন্দোলন উত্থাপিত ৭ দফা দাবি:
১. বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখতে হবে। সময়মতো অর্থ বরাদ্দ ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

২. অবিলম্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের অনুমোদন দিয়ে গণ-পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুততম সময়ে সারা দেশে অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার পিসিআর টেস্টের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

৩. শ্রমিক এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টাইন/আইসোলেশন বা সঙ্গনিরোধের সুবিধা তৈরি করতে হবে।

৪. হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। পর্যাপ্ত ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি ও আনুপাতিক হিসাবে ভেন্টিলেটর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সকল হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতাল সাময়িকভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে।

৫. সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধা বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা সেবা, অবকাঠামো উন্নয়ন, জনবল বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য সেবা সুলভ ও স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে।

৬. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বাধীন সাংবিধানিক কমিশনের অধীনে পরিচালনা করে রেগুলেটরি অথরিটি বা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য কার্যক্রম এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ঔষধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পণ্য ক্রয়ে সকল দুর্নীতির তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর