সমালোচনা এড়াতেই তড়িঘড়ি বাজেট পাস করেছে সরকার: ফখরুল

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 13:40:09

সরকার বাজেটের সমালোচনা এড়াতেই অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি করে বাজেট পাস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সংসদে গত ৩০ জুন, ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি অপরিণামদর্শী ও বাস্তবতাবিবর্জিত গতানুগতিক বাজেট পাস হয়েছে। যাকে অর্থনীতিবিদরা স্বপ্নবিলাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত করার খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে এবারের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে প্রত্যাশিত দীর্ঘ আলোচনা ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। ১৫ জুন অনির্ধারিতভাবে ২৩ জুন বর্তমান অধিবেশন মুলতবি করে মাত্র একদিন (২৩ জুন) বাজেটের সাধারণ আলোচনা করা হয়েছে যা অকল্পনীয়। অথচ ভার্চুয়াল অধিবেশন চালিয়ে হলেও বাজেট আলোচনা দীর্ঘায়িত করে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা যেত। বাজেটের সমালোচনা এড়াতেই অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি করে বাজেট পাশ করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সকাল ১১টায় নিজ বাসা থেকে ভিডিও কনফারেন্স তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, এ বাজেটে লুটপাটকারী, ধনিকশ্রেণি ও আমলাতন্ত্র-নির্ভর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকে প্রস্তুত হয়েছে এবং তাদেরই স্বার্থরক্ষা করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা নানা রকমভাবে সরকারকে পথ দেখাতে চেষ্টা করেছেন। জাতির এই সংকটে বিএনপি তার ওপর সরকারের নানামুখী অত্যাচারের কথা ভুলে করোনা সংকট মোকাবিলায় যেমন ৮৭ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ প্রস্তাবনা দিয়েছিল, একইভাবে এবারের বাজেট কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে গত ৯ জুন আমরা সুনির্দিষ্ট পুনরুদ্ধার পরিকল্পণা সমৃদ্ধ তিন বছরের একটি মধ্য মেয়াদি বাজেট রূপরেখা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের সুপারিশ ও অর্থনীতিবিদদের মতামত উপেক্ষা করে একটি গতানুগতিক অবাস্তব বাজেট পাস করলো।

তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের চিত্র হচ্ছে, ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই ঘাটতি ৫ শতাংশ। সংখ্যানির্ভর মোহাবিষ্ট এই বিরাট বাজেটের ৬৬ শতাংশ আসবে রাজস্ব আয় থেকে৷ যা একেবারেই অসম্ভব। অবশ্য বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, টাকা কোথা থেকে আসবে সে চিন্তা আমরা করিনি৷ আগে টাকা খরচ করি তারপর দেখা যাবে।

ফখরুল বলেন, এই বাজেটে তেলের দাম তলানিতে পড়ে গেলেও তেলের দাম কমানো হয়নি, আয়করের নতুন নিয়মের ক্ষেত্রে কম আয়ের মানুষের কর যেখানে কমবে ৫ হাজার টাকা সেখানে একজন ধনীর কমবে আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত, এই বাজেটে মোট রাজস্বে আয়করের হিস্যা বাড়েনি বরং ১ শতাংশ কমেছে, করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা নিশ্চিত হওয়া প্রায় ১৫ লক্ষ কর্মীর ভবিষ্যতের জন্য রাখা হয়েছে অতি তুচ্ছ বরাদ্দ, বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য নেই কোন উল্লেখযোগ্য কর্মসূচী, করোনা সংকটের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের একটা পর্যটন খাত নিয়ে দেয়া হয়নি একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও।

ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতির ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা সংস্থান করতেও শেষ পর্যন্ত দায়ভার এসে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। কেননা প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআরসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিশাল অঙ্কের কালো টাকা, অপ্রদর্শিত অর্থ সম্পদ, পাচার অর্থ উদ্ধারে বিশেষ কোনো তৎপরতা নেই। এমতাবস্থায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮.২% নির্দিষ্টকরণের মাধ্যমেই বোঝা যায় এই বাজেট স্রেফ একটা সংখ্যানির্ভর মোহাবিষ্ট ধুম্রজাল সৃষ্টিকারী বাজেট। খসড়া বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে গত অর্থবছরের তুলনায় ৩,৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯,২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ জাতি আশা করেছিল বিরাজমান করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। খসড়া বাজেটের পর এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন মহলের জোরালো সুপারিশ সত্ত্বেও সরকার এ বিষয়ে কোন কর্ণপাত করেনি। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আগের মতোই থেকে গেছে যা জিডিপির মাত্র ০.৯ শতাংশ। যা জনগণকে হতাশ করেছে।

করোনার সময়ে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘকাল যে মন্দা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের আয় এবং অভ্যন্তরীণ ভোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়ে রাজস্ব আয়ে চরম ঘাটতি তৈরি হবে। এ ঘাটতি গিয়ে ঠেকবে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকায়। ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকারের মূল পদক্ষেপ হবে ঋণ করা। বাজেটেই উল্লেখ করা হয়েছে ব্যাংক থেকে নেয়া হবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যেটা শেষ পর্যন্ত দ্বিগুণে গিয়ে দাঁড়াবে (এই অর্থবছরেও তাই হয়েছে)। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের এই অকল্পনীয় পরিমাণ টাকা ধার করার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ একেবারে শুণ্যের কোঠায় চলে আসবে যা কর্মসংস্থানের পথ একেবারেই বন্ধ করে দেবে। এতেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না, তাই সরকারকে বিপুল পরিমানের নতুন টাকা ছাপাতে হবে। এই টাকা ছাপানো উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি করে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে প্রচণ্ডভাবে দুর্বল করে দেবে, যার ফল হবে মারাত্মক।

এই বাজেট করোনার সময়ে বীভৎস স্বাস্থ্য সংকটে পড়া মানুষের নাভিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবার বাজেট, এই বাজেট করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া কোটি কোটি অনাহারী মানুষকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ঠেলে দেয়ার বাজেট, এই বাজেট কৃষিকে ধ্বংস করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলার বাজেট, এই বাজেট দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার না করে আরও গভীর মন্দায় ফেলে দেয়ার বাজেট, এই বাজেট দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে ফেলার বাজেট, এই বাজেট দেশের কর্মক্ষম বেকার মানুষকে এবং নতুন করে বেকার হওয়া মানুষকে বেকার রেখে দেয়ার বাজেট, এই বাজেট গরীব মানুষের সুবিধা কমিয়ে ধনীদের সুবিধা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বৃদ্ধির বাজেট, সর্বোপরি এই বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটকারীদের আরও সুযোগ বৃদ্ধির বাজেট।

এ সম্পর্কিত আরও খবর