'দুই একজন গ্রেফতার-পদত্যাগ করিয়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়'

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 20:12:25

দুই একজনকে গ্রেফতার, বদলি কিংবা পদত্যাগ করিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন, করোনা সংকটের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুরবস্থা জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই নয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয়, প্রতিটি সংস্থা, সবখানেই দুর্নীতি অনাচার অনিয়ম। দুই একটা মন্ত্রণালয়ের রদবদল করেও পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্স তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, অপ্রিয় সত্য হলো, নিশিরাতের ষড়যন্ত্রে যারা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলো তাদের মধ্যে থেকে 'এধার কি মাল ওধার মে ঢাল' কিংবা 'চোরে চোরে মাসতুতো ভাই'দের দিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নের আশা করে লাভ নেই। কারণ এই মাসতুতো ভাইরা জানে তাদের 'অবস্থা-অবস্থান-উত্থান' সবটাই ঘটেছে 'দুর্নীতির প্রক্রিয়া, দুর্নীতিবাজদের মাধ্যমে, দুর্নীতিবাজদের দ্বারা'। বাস্তবতা হলো, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে চাইলে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় গোটা সরকারেরই পাল্টাতে হবে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীসহ এই সরকারের পদত্যাগ করতে হবে।

তিনি বলেন, হুমকি-ধমকি, হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের ভয় উপেক্ষা করেও আমরা অব্যাহতভাবে সরকারের অনিয়ম দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করছি, অনিয়মগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। কোভিড-১৯ যেহেতু একাধারে একটি বৈশ্বিক সংকট এবং এটি একটি জাতীয় সংকটও, সুতরাং পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলাম। এমনকি আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, গত ২২ মে স্পষ্ট করেই সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, 'করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখিয়ে নিজেদের কাগুজে সাফল্য দেখানোর চেয়ে বেশি জরুরী করোনাভাইরাস টেস্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন'।

করোনা ভাইরাস টেস্টের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে ভবিষ্যতে নাগরিকদেরকে অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। কিন্তু এই সরকার কোনো কথাই কানে নেয়ার চেষ্টা করছেনা অথবা শুনেও না শুনার ভান করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত এপ্রিল মাসে ওবায়দুল কাদের সাহেব করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি মনিটর করছেন। নির্দেশনা দিচ্ছেন, তদারকি করছেন'। জনগণ জানতে চায়, প্রধানমন্ত্রী যদি করোনা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটর করেন তাহলে ভুয়া প্রতিষ্ঠান 'জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং রিজেন্ট হসপিটাল' করোনা 'টেস্ট ও ট্রিটমেন্টে'র অনুমতি পেলো কেমন করে? এরপর দেখা গেছে, এইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান কেমন করে করোনা 'টেস্ট ও ট্রিটমেন্টে'র অনুমতি পেয়েছে সেটি নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরেই নতুন নাটক জন্ম দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে 'জেকেজি এবং রিজেন্ট' কাজ পেয়েছে। অপরদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা কিছুই জানেনা। মরণঘাতী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যখন সারাবিশ্বে এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে কাজ করছে, তখন এমন একটি জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে নেয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে, প্রধানমন্ত্রী জানেন না, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না তাহলে জানবেটা কে ? কার জানা উচিত? জনগণের প্রশ্ন, দেশটা আসলে চালায় কে?

তিনি বলেন, আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই দুই ভুয়া প্রতিষ্ঠান, প্রকাশ্যেই অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে করোনা সার্টিফিকেট ইস্যু করার নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে। সরকার দেখেও না দেখার ভান করেছিল। কিন্তু যখন দেখা গেলো, টাকার বিনিময়ে এই দুই ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা 'করোনা নেগেটিভে'র ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যাত্রীরা ঢুকতে পারছেনা, তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে, বাংলাদেশের যাত্রীরা 'ভাইরাস বোমা' হিসেবে অভিহিত হচ্ছে তখন এই নিশিরাতের সরকারের টনক নড়েছে। ততক্ষণে বাংলাদেশের ক্ষতি যা হওয়ার তার অনেকটাই হয়ে গেছে।

রিজভী বলেন, এই সরকারের দুর্নীতি অব্যবস্থাপনার কারণে যখন দেশে রাজস্ব আয়ের নানা ক্ষেত্র সংকুচিত, তখনও রাষ্ট্রের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব খাত ছিল রেমিটেন্স। এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই প্রায়শই সরকারকে বৈদেশিক রিজার্ভ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। অথচ, নিশিরাতের সরকারের অদক্ষতা, অদূরদর্শিতায় করোনাভাইরাস টেস্ট নিয়ে কেলেঙ্কারির কারণে রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত সেই প্রবাসী বাংলাদেশিরাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। ইতালি এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঢুকতে পারবেন কিনা এ নিয়ে যেমন সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে পাশাপাশি যারা রয়েছে তাদেরকেও নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর