ভয় নাকি ভালোবাসায় আসিফের জাপায় ফেরা?

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 06:21:24

ভালোবাসা নয়, ভয় থেকেই ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফকে জাতীয় পার্টিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কৌশলগত কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজের অবস্থান বদলাতে বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

আরেকপক্ষ মনে করছেন, ভাতিজাকে জিএম কাদের অনেক পছন্দ করেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে পার্টিতে ফিরিয়ে এনেছেন। এছাড়া তিনি আরও অনেক বহিষ্কৃত নেতাকে পার্টিতে ফিরিয়ে এনেছেন। অন্যদেরকেও ফিরিয়ে এনে দল শক্তিশালী করতে চাইছেন।

তবে যারা ভয়ের কথা বলছেন তাদেরও যুক্তি রয়েছে। তারা মনে করছেন, প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পরিবারে দ্রুত মেরুকরণ শুরু হয়েছে। এর পেছনে জিএম কাদেরের একরোখা মনোভাব অনেকাংশে দায়ী। একচ্ছত্র ক্ষমতা আর ‘একলা চলো নীতি’ তাকে পরিবার থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। জাতীয় পার্টির রাজনীতিকে এরশাদের ভাগিনা আদেলুর রহমান আদেল ছাড়া আর কাউকেই সেভাবে প্রমোট করেননি। অন্যান্য সবাইকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। জীবদ্দশায় ভাতিজা মেজর (অব.) খালেদ আক্তারকেও পার্টি থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।

আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে অন্যরা। বিশেষ করে রওশন ও বিদিশা মতপার্থক্য ভুলে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে তারা কাছাকাছি অবস্থান করছেন। একইভাবে দুই ভাই রওশন পুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ ও বিদিশার পুত্র এরিখ এরশাদ এখন অনেক কাছাকাছি। সম্প্রতি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তাদেরকে একত্রে দেখা গেছে। এরিখের জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে আসিফ, সাদ ও এরিখকে আনন্দঘন পরিবেশে।

এরশাদের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীর আয়োজনেও তাদেরকে আন্তরিক পরিবেশে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট পার্কে সাদ ও এরিখ একসঙ্গে গিয়ে প্রয়াত এরশাদের প্রতিকৃতে ফুল দেন। এ সময় দুই ছেলের কাঁধে দুই হাত রেখে এরশাদের প্রতিকৃতির দিকে এগিয়ে যান বিদিশা। অন্যদিকে রওশন এরশাদের বাসায় আয়োজিত পৃথক অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলে এরিখ। সেখানে ছোটভাইয়ের হাজিরের খবর পেয়ে রাস্তার উপর এসে এরিখকে স্বাগত জানান সাদ। এসব অনুষ্ঠানে আসিফকে অংশ নিতে দেখা গেছে।

সাম্প্রতিক এসব কর্মকাণ্ডকে পারিবারিক নতুন মেরুকরণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। জিএম কাদেরের নেতৃত্ব থেকে সরাতে একাধিক মিটিং করারও খবর পাওয়া গেছে। তারা রওশনকে সামনে রেখে কিছু একটা করতে চান। এতে সলতে যোগাচ্ছেন বিদিশাও। প্রেসিডেন্ট পার্কেই একাধিক বৈঠক করারও খবর রটেছে।

পারিবারিক এই মেরুকরণের খবরে কিছুটা ভীত হয়ে পড়েছেন জিএম কাদের। আর সেই ভয় থেকে বিরোধী জোটে ফাটল ধরাতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন তিনি। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে বড় ভাইয়ের ছেলে আসিফ শাহরিয়ারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখানে ভালোবাসা যতোটা ভূমিকা পালন করেছে। তার চেয়ে বেশি কাজ করেছে পারিবারিক মেরুকরণ। ভালোবাসা যা দেখানো হচ্ছে পুরোটাই লোক দেখানো।

জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার পর নিজের স্ত্রী শেরিফা কাদেরকে প্রমোশন দিয়ে করেছেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। একইভাবে মেয়ের জামাইয়ের ভাইকেও পার্টির উপদেষ্টা পরিষদে স্থান করেছেন।

এদিকে আসিফকে ফিরিয়ে পারিবারিক মেরুকরণ কতটা সামাল দিতে পারবেন তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। একইভাবে আসিফের এই ফেরানোতে জাপার রংপুরের রাজনীতিকে নতুন জটে পরিণত করতে পারে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব (চট্টগ্রাম বিভাগ) অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি বিষয়টি পারিবারিক মেরুকরণের কিছু দেখি না। জাতীয় পার্টি এখন যৌথ নেতৃত্বে চলছে। এখানে ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) আলাদা দল করলে, কিংবা আসিফ শাহরিয়ার যদি আলাদা দল করতো তখন এসব কথা উঠতো। রংপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অন্যান্য দলের এমন বিদ্রোহী প্রার্থীকে পরে দলে নেওয়ার নজীর রয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখন সবাইকে নিয়ে পার্টি করতে চাইছেন। তাই ভাতিজাকে ফিরিয়ে এনেছেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর