তিন কৌশলে বেশি জোর আওয়ামী লীগের

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 10:33:17

  • জনপ্রিয় ও উইনেবল প্রার্থীদের দলীয় সবুজ সংকেত গোপনে দেওয়া

  • একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কঠোরভাবে দমন করা

  • নির্বাচন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকা

চলতি বছরের শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বাকি মাত্র দেড় মাস। ইতিমধ্যেই সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। নানা সমীকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জোট-মহাজোটও। তাই নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আরো বেশি তৎপর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি দলীয় কোন্দল মেটাতে তিন কৌশলের উপর জোর দিচ্ছেন তারা।

দলের নীতি নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামত, জরিপ, মাঠ পর্যালোচনা ও অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে তফসিলের আগেই নিজ নিজ আসনে জনপ্রিয় ও উইনেবল প্রার্থীদের দলীয় সবুজ সংকেত গোপনে দেওয়া, একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কঠোরভাবে দমন করা এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল মেটাতে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকার কৌশলের উপর এখন জোর দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য বার্তা২৪.কম এর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) জনমত জরিপ, তৃণমূলের মতামত, সব কিছু মিলিয়ে যিনি উইনেবল ক্যান্ডিডেট তাকেই মনোনয়ন দেবেন। অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিদের তফসিলের আগেই গোপনে সবুজ সংকেত দেয়া হবে। যোগ্য প্রার্থীদের কাছে কেন্দ্র থেকে নেত্রীর বার্তা পৌঁছে যাবে। তাদের আরো বেশি করে জনগণের কাছে যেতে বলা হবে। আপা (শেখ হাসিনা) সবার খোঁজ-খবর রাখেন। তিনি মাঠের সব হিসাব-নিকাশ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আর দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। বিদ্রোহীদের অতীতে দু’একবার ছাড় দেয়া হলেও এবার আর তেমনটি হবে না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, অনেক আগে থেকে আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক প্রস্তুতিও চলছে। আমাদের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই কয়েক ধাপে তৃণমূলের নেতা ও দলীয় জনপ্রতিনিধিদের গণভবনে ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে দলীয় মনোনয়ন বা গ্রুপিংয়ের কারণে নিজেদের মধ্যকার বিদ্যমান বিভেদ দ্রুত সমাধান করারও নির্দেশ দিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে হ্যাট্রিক জয়ের লক্ষ্য নিয়ে দুই বছর ধরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে আওয়ামী লীগ। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির চেয়ে সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকতে চান তারা। দলীয় প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, উন্নয়ন প্রচার, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতে উঠান বৈঠক, বর্ধিত সভা, কর্মিসভা, পথসভা, জনসভাসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি শুরু করা দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর ইতিমধ্যেই শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ১৫টি টিমে বিভক্ত হয়ে এই সফর করেন। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করছেন। প্রথমে তিনি বিভাগীয় শহরগুলোতে যান। এখন তিনি জেলা পর্যায়ে সফর করছেন। সর্বশেষ তিনি পাবনা সফরে গিয়ে বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর এই সফর চলবে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আবারো বিভাগ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মীসভা শুরু করবেন। বিরোধপূর্ণ জেলা-মহানগরকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই কর্মী সভাগুলোর মাধম্যে তৃণমূলের নেতাদের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করা হবে বলে জানা গেছে।

তারই ধারাবাহিকতায় ৩০ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনায় অংশ নিতে আওয়ামী লীগের ডজনখানেক কেন্দ্রীয় নেতা সিলেটে যান। সিলেট মহানগর ও জেলা আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় অংশে নেন তারা। সূত্র জানিয়েছে, আলোচনা সভার পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়েছে। সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনের স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব, বিশ্বাসঘাতকতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রমাণ পেয়েছিল কেন্দ্রীয় হাই কমাণ্ড। সেগুলো নিয়ে সেখানে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করার নিদের্শ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে বিদ্রোহ ও গ্রুপিং সহ্য করা হবেনা বলেও হুশিয়ারি দিয়ে এসেছেন আওয়ামী লীগের হাইকামাণ্ড। জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে  ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে খুব শিগগির সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটি পুর্নগঠিত হতে পারে। মেয়াদউত্তীর্ণ বর্তমান কমিটির শীর্ষ দুই পদে পরিবর্তন আসতে পারে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কারা কি করেছেন, দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিশ্বাসঘাতকরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নৌকাকে পরাজিত করেছেন, নৌকা ঠেকানোর নেতৃত্ব কে দিয়েছেন? এসব আত্মবিনাসী প্রতিযোগিতাকারীরা রেহাই পাবেন না। অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। সব খতিয়ে দেখছি, দোষ প্রমাণ হলে রেহাই নেই-নৌকার বিরোধিতাকারী যতবড় প্রভাবশালীই হোন না কেন রক্ষা পাবেন না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর