রাতের একাকি আকাশে অনেক তারা জ্বলে। তবে এই অনেকের মধ্যে নিজের উজ্জ্বলতা ঠিকই একটু আলাদা করে জানিয়ে দেয়-ধ্রুবতারা! একটু বেশি আলোকিত।
শেখ কামাল আমাদের ক্রীড়াঙ্গন তথা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং বৃহৎ অর্থে দেশ গড়ার কাজে তেমনই এক ধ্রুবতারা। মাত্র ২৬ বছর বয়সের জীবনে একজন মানুষ কিভাবে নিজেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিভূ হয়ে উঠতে পারেন- শেখ কামালের জীবন দর্শন তারই প্রমাণ!
সাধারণত এই বয়সে সবাই মাঠের খেলোয়াড়ই হতে চায়। শেখ কামালও মাঠের খেলোয়াড়ই ছিলেন। বাস্কেটবল খেলেছেন। ফুটবল খেলেছেন। ক্রিকেটেও নিয়মিত ছিলেন। বাসার লনে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। পুরোদস্তুর অ্যাথলিট। ঝলমলে তারুণ্যের এই সময়টায় খেলার মাঠে জিতেই যে কোনো তরুণ সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে চায়।
কিন্তুু শেখ কামাল ছিলেন ব্যতিক্রম। মাঠের খেলায় পারদর্শিতা থাকলেও তার চিন্তা-ভাবনার দিগন্ত যে ছিল অনেক দূর ছাড়িয়ে। স্বপ্ন দেখতেন শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, পুরো দেশকে নিয়ে। আর তাই যে বয়সে তার মাঠ দাবড়ে বেড়ানোর কথা, তখন তিনি নিজেকে পরিণত করেছেন ক্রীড়াঙ্গনের পরিকাঠামো তৈরির স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে। তার সেই স্বপ্নের ফসল আধুনিক স্পোর্টস ক্লাব আবাহনী ক্রীড়া চক্র।
আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলছেন- ‘কামাল বয়সে আমাদের জুনিয়র ছিল। কিন্তু স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই, আমরা বয়সে বড় হলেও তার চিন্তা-চেতনা আর দশজনের চেয়ে আলাদা ছিল।’
ধ্রুবতারা যে একটু আলাদাই হয়!
তিনি অনেকভাবেই পরিচিত। রণাঙ্গনের তুখোড় মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক সংগঠক। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য। আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের সংগঠক। আধুনিক ব্যান্ড সঙ্গীতের স্রষ্টা। সেতার বাজাতে পারতেন। তবলায় দক্ষতা ছিল। হারমোনিয়ামে যে কোনো সুর তোলার ওস্তাদি ছিল। গিটারেও সমান প্রতিভা। মঞ্চনাটকের প্রতি ভালোবাসা ছিল।
ক্যারিশম্যাটিক অলরাউন্ডার!
দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে তো জীবন অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু সেই তরুণ বয়সেই শেখ কামালের স্বপ্ন জুড়ে যে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির প্রেক্ষাপট গড়ে তোলার জন্য দেশটির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনকে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন শেখ কামাল।
আর তাই নিজের জীবনের সেরা সময়টাকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সংগঠক হিসেবে। জানতেন তারুণ্যকে সঠিক কাজে লাগাতে পারলে দেশ গড়ার বাকি কাজটা সহজ হয়ে যাবে। শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, সেটা সফল করার জন্য যে কায়িক পরিশ্রমও করতে হয়- সেই শিক্ষাটাই ছিল শেখ কামালের। আর তাই শুধু নির্দেশ বা পরামর্শ দেওয়ার মধ্যেই নিজের কাজের পরিসীমাকে আটকে রাখেননি তিনি। নিজ হাতেই গেঁথেছেন স্বপ্নসৌধ।
ধ্রুবতারা যে অমনি হয়!
স্বপ্নদ্রষ্টা। দূরদর্শিতা। সুর-তাল-লয় ও খেলার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। সাংগঠনিক দক্ষতা। নিজস্ব সাংস্কৃতিক বলয়ের মধ্যে থেকেই আধুনিকতার সঙ্গে পরিশীলিত মাধুর্য্যের অর্জন। সময়ের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখা। বহুমূখী এই কর্মদক্ষতাই শেখ কামালের বড় পরিচয়। তার হাতে গড়া আবাহনী ক্রীড়া চক্র আজ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসের অন্যতম গৌরবের অংশীদার।
স্পেনের নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে দেশটির দুটি ক্লাবের নাম চোখের সামনে ভাসে- বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। পাঁচ দশক আগের বাংলাদেশে আবাহনী ক্রীড়া চক্রকে নিয়েও সেই স্বপ্নই দেখেছিলেন শেখ কামাল।
আজ তাই আবাহনীর আনন্দের রাতে দূর আকাশের একটি তারা ঠিকই বাড়তি উজ্জ্বলতা ছড়ায়। পথ দেখায়। মাঝ সমুদ্রের নাবিক সেই দিকদর্শনেই খুঁজে সঠিক সীমান্ত পাড়!
ওটাই ধ্রুবতারা! নীল ধ্রুবতারা!