করোনায় আক্রান্ত ফুটবলাররা, আর বাফুফে ব্যস্ত ক্ষমতার ধান্দায়!

ফুটবল, খেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 12:49:07

তিন দিনে জাতীয় দলের ২৪ ফুটবলারের ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত! ৭৫ ভাগ ফুটবলারই কোভিড-১৯ পজিটিভ! বিস্মিত না হয়ে উপায় আছে? প্রশ্ন উঠতে পারে আদৌ এই ফুটবলারদের কোনো অভিভাবক আছে কি?

কাগজে কলমে অবশ্যই আছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরই (বাফুফে) তো আগলে রাখার কথা ছিল তাদের। যেমনটা মার্চ থেকেই দেখা গেছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) করোনা মহামারীর শুরু থেকেই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বিশেষ যত্নে রেখেছে। ঠিক করে দিয়েছে তাদের জীবন যাত্রা।

মিরপুরের শেরে বাংলা থেকে আরামবাগের বাফুফে ভবন বেশি দূর না হলেও পেশাদারিত্বে তাদের দূরত্বটা যেন আকাশ-পাতাল! ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের ক্যাম্প শুরু করতে গিয়ে আরও একবার বেরিয়ে এসেছে বাফুফে কর্তাদের উদাসীনতার নমুনা।

এভাবে নানা কাণ্ডে আলোচনায় থাকাটা তাদের জন্য অবশ্য নতুন নয়। কিন্তু তাই বলে যাদের জন্য ফুটবল ফেডারেশন সেই ফুটবলারদেরকে নিয়ে এমন অবহেলা! দেশের সম্পদ জাতীয় খেলোয়াড়দের হাসি-ঠাট্টার অংশে পরিণত করলেন বাফুফের কর্তারা।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ সামনে রেখে প্রাথমিকভাবে ডাক পাওয়া ৩৬ জন ফুটবলার নিয়ে ৭ আগস্ট থেকে শুরু করার কথা ছিল অনুশীলন ক্যাম্প। গাজীপুরের ছায়া সুনিবিড় সারাহ রিসোর্টও ছিল প্রস্তুত। তার আগে ফুটবলারদের বাধ্যতামূলক করোনাভাইরাস টেস্ট করতে গিয়েই জানা গেল, গত মাস চারেক ফুটবলাররা কিভাবে কোথায় দিন কাটিয়েছেন কিছুই হয়তো জানা ছিল না বাফুফের।

এ অবস্থায় ঠিক হয়- ফুটবলাররা প্রথমে নিজ নিজ উদ্যোগে করাবেন। এরপর তাদের অফিসিয়ালি টেস্ট করাবে বাফুফে। খেলোয়াড়রা প্রথমে নিজ উদ্যোগে নিজেদের সুবিধা মতো স্থানে টেস্ট করিয়েছেন। যেখানে ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ ছাড়া সবারই কোভিড-১৯ রিপোর্টই আসে নেগেটিভ।

এরপর ৫ আগস্ট থেকে বাফুফে নিজেদের উদ্যোগে শুরু করে বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ধাপে ১১ জন; ৬ আগস্ট দ্বিতীয় ধাপে আরও ১২ জনের করোনা পরীক্ষা হয়। দুই দিনে মোট ২৩ জনের মধ্যে ১১ জন করোনা পজিটিভ হন। বাকিদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় গাজীপুরের সারাহ রিসোর্টে। খেলোয়াড়রা ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার একদিন পরই আসে চমকে যাওয়া খবর! শুধু ১১ জনই নয়, করোনায় আক্রান্ত ফুটবলার মোট ১৮ জন!

এরমধ্যে প্রথম ধাপে পজিটিভ হওয়া ৪ ফুটবলার হয়েছেন- সুমন রেজা, নাজমুল ইসলাম রাসেল, ম্যাথিউস বাবলু ও বিশ্বনাথ। দ্বিতীয় ধাপে শহিদুল আলম সোহেল, সোহেল রানা, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সুশান্ত ত্রিপুরা, রবিউল হাসান, আনিসুর রহমান জিকো ও টুটুল হোসেন বাদশা।

নেগেটিভ সার্টিফিকেট পেয়ে ক্যাম্পে যোগ দেন- মঞ্জুরুর রহমান মানিক, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ পারভেজ, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, পাপ্পু হোসেন, রহমত মিয়া, ইয়াসিন আরাফাত, মানিক হোসেন মোল্লা, বিপলু আহমেদ, মাহবুবুর রহমান সুফিল, রকিব হোসেন, সাদউদ্দিন, রিয়াদুল হাসান রাফি ও আরিফুর রহমান।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো-নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে ১৩ জন ফুটবলার সারাহ রিসোর্টে গিয়ে দুদিন থাকার পর ফের নতুন রিপোর্ট এসেছে। সেখানে আরও ৭ জনের করোনা পজিটিভ! সেই ফুটবলাররা হলেন- মঞ্জুরুর রহমান মানিক, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ পারভেজ, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, পাপ্পু হোসেন, রহমত মিয়া, ইয়াসিন আরাফাত, মানিক হোসেন মোল্লা, বিপলু আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান সুফিল।

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে তাদের নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিলেন কারা?

পুরো ব্যাপারটা খোঁজ নিতে গিয়ে বাফুফের কর্তাদের হযবরল কাণ্ড উঠে এসেছে। হাসপাতালে করোনা টেস্ট করানো হলেও সেখানে খেলোয়াড়দের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। ফুটবলারদের ফলাফল নেগেটিভ না পজিটিভ সেটা মুঠোফোনে কল করে কিংবা এসএমএস- এ জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম ধাপে যে দুই-তিন জনের নম্বর দেওয়া ছিল তাদের হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। বাকিদের ব্যাপারে কোনো রকম তথ্যই দেওয়া হয়নি। আর বাফুফে বিস্ময়করভাবে মনগড়া রিপোর্ট বসিয়ে খেলোয়াড়দের পাঠিয়ে দেয় গাজীপুরের ক্যাম্পে।

অবাক করা ব্যাপার হলো ফুটবলাররাই নন, বাফুফের একজন কোচও রয়েছেন আক্রান্তের তালিকায়। আর তিনি সুস্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে গিয়ে সারাহ রিসোর্টে ঘুরে বেড়িয়েছেন! কি অদ্ভুদ কাণ্ড!

শুক্রবার আইইডিসিআর (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) থেকে এক ফুটবলারকে ফোন করতেই চমকে উঠা এই খবর ছড়িয়ে পড়ে। তাকে ফোন করে বলা হয় আপনারা কিসের ক্যাম্প করছেন? ক্যাম্পে তো অনেক খেলোয়াড় করোনা পজিটিভ। এরমধ্যে রয়েছেন কোচও। ক্যাম্প বন্ধ করুন আপনারা!

এই হলো বর্তমান বাফুফের কর্তা-ব্যক্তিদের কাণ্ড! দেশের সম্পদ, দেশের পতাকা যারা বহন করেন সেই জাতীয় ফুটবলারদের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলায় বইছে সমালোচনার ঝড়। তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির দায় কে নেবেন এমন প্রশ্নও উঠেছে। যেখানে ২৪ ফুটবলারের ১৮জনই করোনা পজিটিভ সেখানে আবার ফুটবল ক্যাম্প কিসের?

এই যখন অবস্থা তখন কিন্তু ৮ অক্টোবর সিলেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ পেছানোর সুযোগ নেই। এই ম্যাচ দিয়েই ফের বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব শুরু করবে বাংলাদেশ।

এর মধ্যেও কিন্তু বাফুফের চেয়ার আকড়ে থাকার চেষ্টা চলছেই। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শীর্ষ পদে থাকলেও কাজী সালাউদ্দিনরা থাকতে চাইছেন আরও ৪ বছর। ফুটবলারদের যথেষ্ট স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার কথা মাথা থেকে সরিয়ে নির্বাচনে জিততে কাউন্সিলরদের প্রভাবিত করার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। তাদের এমন কীর্তিই আসলে বুঝিয়ে দেয় কেন পেছন পথে হাঁটছে দেশের ফুটবল! কেন ফুটবলে সাফল্য এখন শুধুই সোনার হরিণ!

এ সম্পর্কিত আরও খবর