ম্যাচের প্রথম ৩১ মিনিটে স্কোরলাইন ৪-১! এবং এই পাঁচ গোলের সবগুলোই করলো বায়ার্ন মিউনিখ! বার্সার পাওয়া গোলটাও বায়ার্ন মিউনিখের আত্মঘাতী গোল! বার্সার পোস্টে একের পর এক আক্রমণ, এবং তাতেই যেন গোলমুখ খুলে পুরো হাঁ। ডান-বাম, আশপাশ যেদিক থেকে শট নিচ্ছে বায়ার্ন-সবই গোল। এমনকি ডিফ্লেক্ট থেকেও গোল পাচ্ছেন বায়ার্ন। বার্সার ভাগ্য কিছুটা ভালো শুরুর অর্ধ মাত্র ৪-১ ই থাকলো। অথচ এটি হতে পারতো ৭-১!
তবে ৩১ মিনিটে স্কোরলাইন ৪-১ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারাভাষ্যকারও বলে দিলেন-ম্যাচ ফিনিসড ফর বার্সা!
তবে শেষটা দেখার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতেই হলো। এবং সেটা হলো গোল উৎসবের আরেক মঞ্চায়ন। ৮-২ গোলে বার্সাকে গোল বন্যায় ভাসানোর রাতে বায়ার্ন মিউনিখ যে ফুটবল খেলল, তা তুলনাহীন। বার্সাকে এভাবে এত সহজে নকআউট করা যাবে-সম্ভবত ম্যাচের আগে বায়ার্নের ঘোরতর সমর্থকও এই চিন্তা করেনি!
১৯৪৬ সালে সেভিয়ার কাছে ৮ গোলে হেরেছিল বার্সা। ৭৪ বছর পর আরেকবার ৮ গোলের লজ্জায় ডুবল তারা। অসম্ভব দাপুটে এই জয়ে বায়ার্ন মিউনিখ পৌছে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে। আর বার্সা বড় কোন সাফল্য ছাড়াই এবারের ফুটবল মৌসুম শেষ করল।
বার্সা-বার্য়ানের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ মানেই গোল বন্যার আনন্দ। সেই আনন্দ তরিয়ে তরিয়ে উপভোগ করলো বায়ার্নেও সমর্থকরা।
আগে গোলের গল্পটা।
ইভান পেরিসিচ বামদিক থেকে বল বাড়ান। ডি বক্সের সেন্টারে বল পায়ে নেন থমাস মুলার। সামনে দাড়ানো রবার্ট লেভানদোস্কিকে পাস দেন। ওয়ান-টু পাসে ফিরতি বল পান মুলার। সেখান থেকে জোরে শট। বল বার্সার জালে (১-০)।
ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ৩ মিনিট।
হাই লাইন ডিফেন্সে খেলতে গিয়ে খানিকবাদে এগিয়ে থাকার সুযোগটা হারায় বায়ার্ন। বামদিক থেকে জোর্ডি অ্যালবা ডিবক্সের মাঝে লুই সুয়ারেজের খোঁজে বল বাড়ান। মাঝপথে সেই বলে বাধা দিতে গিয়ে বায়ার্ন ডিফেন্ডার ডেভিড অ্যালবা পা বাঁধিয়ে নিজের জালেই বল ঠেলে দেন (১-১)।
ম্যাচের বয়স তখন ৭ মিনিট।
সার্জে গ্নাবরি কাছ থেকে পাওয়া বলে ইভান পেরিসিচ মাটি ঘেঁষা শট নেন। বার্সার কিপার মার্ক-অ্যান্দ্রে স্টেগান পায়ে লাগিয়ে গোল বাঁচাতে পারেননি। ম্যাচে সেই যে এগিয়ে গেল বায়ার্ন, তারপর আর তাদের থামানো গেল না (২-১)।
ঘড়ির কাঁটায় ম্যাচ তখন গড়িয়েছে মাত্র ২১ মিনিট।
পরের গোলের নায়ক সার্জে গ্নাবরি। বার্সার ভাঙ্গাচোরা ডিফেন্সের ভুলে লিওন গোরেতজা সামনে দাড়ানো সার্জে গ্নাবরির দিকে বল বাড়িয়ে দেন। সেই বলে প্রচন্ড শট গ্নাবরির। বল বার্সার জালে। বায়ার্নের লিড ৩-১।
ম্যাচ তখন হয়েছে মাত্র ২৭ মিনিট।
স্কোরলাইন ৪-১ করার দারুণ সহজ একটা সুযোগ নষ্ট করেন খানিকবাদে বরার্ট লেভানদোস্কি। সামনে এগিয়ে এসে একাই গোলটা বাঁচান বার্সা গোলকিপার।
কিন্তু সেই সুখ বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারেনি বার্সা। বামদিকের কর্নারের কাছ থেকে বার্সার পোস্টে বল রাখেন জসুয়া কিমিচ। সামনে থাকা মার্কারকে পেছনে ফেলে সেই বলে পা ছোঁয়ান মুলার। ব্যাস তাতেই বল জালে (৪-১)।
ম্যাচ হয়েছে তখন মাত্র ৩১ মিনিট।
৪-১ গোলে এগিয়ে থাকার আনন্দ নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে বার্য়ান। আর যখন ফিরলো দ্বিতীয়ার্ধে তখন আরো চারটি গোল! এর মাঝে সুয়ারেজ একটা গোল করলেও বার্সা লজ্জা এড়াতে পারল কই?
পুরো ম্যাচে বার্সাকে মনে হয়েছে ক্লান্ত, হতাশ এবং বয়সের ভারে ন্যূব্জ একটি দল। যারা মাঠে ঠিক কি করবে, সেটাই জানে না। কোন পরিকল্পনা নেই। কোন কৌশল নেই। আর বার্য়ান ছিল পরিশ্রমী, তেজি এবং প্রতিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করার মেজাজে। ৮-২ গোলের এই ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে বার্সেলোনাকে নিয়ে চোর-পুলিশ খেলছে বায়ার্ন। ইচ্ছে হলেই আক্রমণে যাচ্ছে। ইচ্ছে হলেই গোল দিচ্ছে। যে যেভাবে পারছে গোল দিচ্ছে।
৬৩ মিনিটের সময় কিমিচ যে গোলটি করেন তার পুরো কৃতিত্ব অবশ্য আলফনসে ডাভিসের। ১৯ বছর বয়সী এই টিনএজার বার্সার নেলসন সেমেন্দেকে নিয়ে যা করলেন তাকে বলে ছেলেখেলা! ড্রিবলিংয়ের জাদুতে সেমেন্দেকে মোহিত রেখে বার্সার ডিফেন্স চিরে ডাভিস সামনে বাড়েন। পোস্টের একেবারে কাছে পৌছেও দারুণ ধীরস্থির ভঙ্গিতে সামনে দাড়ানো কিমিচের দিকে বল বাড়ান। কিমিচ তিন হাত দুর থেকে বলটা জালে জড়ান। এই গোলে কিমিচের নাম থাকলেও শতকরা ৯৯ ভাগ কৃতিত্ব ডাভিসের।
ম্যাচের ৭০ মিনিটের সময় বার্সা যতগুলো আক্রমণে গেছে তারচেয়ে বেশি বায়ার্ন তো গোলই করে বসেছে!
ম্যাচের আগে তাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনার অংশ হিসেবেই স্কোরশিটে নিজের নাম লেখালেন বরার্ট লেভানদোস্কি। ৮২ মিনিটের সময় ফাঁকায় দাঁড়ানো জায়গায় হেডে গোল করেন বার্য়ানকে এনে দেন ৬-২ গোলের লিড।
শেষ দুটো গোল করেন কুটিনহো। বার্সা থেকে বায়ার্নে আসা এই মিডফিল্ডার তার সদ্য সাবেক দলের বিরুদ্ধে জোড়া গোলের পর আনন্দ প্রকাশ পর্যন্ত করেননি।
৮-২ গোলের এই হার বার্সাকে আজীবন যন্ত্রণা দেবে। এই মৌসুমে পুরো বার্সেলোনা যে একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে গেছে-তাতেই যেন সীল মোহর এঁকে দিলো ৮ গোল হজমের এই ম্যাচ!
কোন সন্দেহ সেই বার্সার কোচ হিসেবে সেতিয়েন তার শেষ ম্যাচ দেখে ফেলেছেন! আর মেসি এই ম্যাচে খেলেছেন কিনা- সেটা জানা গেছে একাদশে শুধু তার নামটা দেখে!