কি বলা যায় একে?
মধুর সমাপ্তি! তাছাড়া আর কি! ক্যারিয়ারের শুরুর আর শেষের সঙ্গে কি দারুণ মিল! এক যুগ আগে নিজের প্রথম টেস্টের শুরু সেঞ্চুরি দিয়ে। প্রতিপক্ষ ভারত। জীবনের শেষ টেস্টে খেলতে নামলেন সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। সেই বিদায়ী টেস্টেও সেঞ্চুরি! টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান অ্যালিস্টার কুক জীবনের প্রথম এবং শেষ টেস্ট সেঞ্চুরির হাসিতে রাঙালেন।
বাহ্ কি অনন্য অর্জন!
তার আগে সর্বশেষ এই অর্জনের কৃতিত্ব ছিল ভারতের মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের। তবে এই ব্যতিক্রমী রেকর্ডের তালিকায় সর্বপ্রথম নাম লেখান অস্ট্রেলিয়ার রেজিনাল্ড ডাফ। তারপর এই অনন্য তালিকায় সঙ্গী হয়েছেন আরো দুই অস্ট্রেলিয়ান উইলিয়ামস পন্সফোর্ড ও গ্রেগ চ্যাপেল। সংক্ষিপ্ত সেই তালিকায় একমাত্র এশিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে নাম রয়েছে ভারতের মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের। ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুক এখন সেই গর্বিত তালিকার সর্বশেষ এবং পঞ্চম সদস্য।
ভারতের বিপক্ষে ৫ টেস্টের চলতি সিরিজে ব্যাট হাতে অ্যালিস্টার কুকের ফর্ম মোটেও ভাল যাচ্ছিল না। সিরিজের প্রথম চার টেস্টের আট ইনিংসে কোন হাফসেঞ্চুরি পর্যন্ত পাননি! চতুর্থ টেস্টের পর হঠাৎ করেই কুক টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসেন। জানান-ওভালে সিরিজের শেষ টেস্টে খেলে তিনি টেস্ট ক্রিকেটকে গুডবাই জানাতে চান। শেষ টেস্টের আগেই ইংল্যান্ড সিরিজ জিতে নিয়েছিল ৩-১ ব্যবধানে। ওভালে শেষ টেস্টের ফল নিয়ে তাই তেমন কারো আগ্রহ ছিল না। সব আর্কষণ ও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু তখন একটাই-কুকের বিদায়ী টেস্ট। আর কৌতুহল শুরু হয় বিদায়ী টেস্টকে কি সেই প্রথম টেস্টের মতো সেঞ্চুরি দিয়ে রাঙাতে পারবেন তিনি? প্রথম ইনিংসেই সেঞ্চুরির সুযোগটা ছিল। কিন্তু ৭১ রান করে সেই ফায় আউট হয়ে যান কুক। ম্যাচের তৃতীয়নি শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে যখন অপরাজিত ৪৬ রান নিয়ে ফিরেন তখন আরেকবার সেই সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখা শুরু। এবার আর ভুলচুক করলেন না কুক। দিনের শুরুতে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর সাবধানী ভঙ্গিতে ব্যাট চালান। কুকের রান যখন ৯০ তখন পুরো ওভাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি রুদ্ধশ্বাস নিয়ে তার সেঞ্চুরির অপেক্ষায়।
ইংল্যান্ড ইনিংসের ৬৯.১ নম্বর ওভারে এল সেই আনন্দময় মুর্হূত। ৯৬ রানে ব্যাট করছেন কুক। স্পিনার রবিন্দু জাদেজার বল আলতে ভঙ্গিতে খেললেন। একটা সহজ রান হয়ে যাবে। কিন্তু সেই বল কুড়িয়ে জাসপ্রিত বুমরা জোরে থ্রো করলেন। বল সোজা ওভার থ্রো হয়ে বাউন্ডারিতে! কুকের নামের পাশে যোগ হল ৫ রান। সেই সঙ্গে সেঞ্চুরি পুরো! ননষ্ট্রাইক প্রান্ত থেকে দৌড়ে এসে জো রুট তাকে জড়িয়ে ধরলেন। গোটা ওভাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি াড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানাল। হেলমেট খুলে হাতে থাকা ব্যাটকে ৩৬০ ডিগ্রী স্টাইলে ঘুরিয়ে কুক র্শকরে সেই অভিনন্দনের জবাব দিলেন। ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে তখন আনন্দের বন্যা। স্পেশাল গ্যালারিতে কুকের পরিবারও এই আনন্দঘন মুর্হূত উদযাপনে ফেটে পড়ল। র্শকরে হাততালি যে থামছেই না। বেশ খানিকক্ষনের জন্য খেলা থেমে রইল। কুকের মৃদু হাসিতে তখন সুখ বইছে। পুরো অবয়ব জুড়ে তার তৃপ্তির আনন্দ। মিশন সফলের হাসি।
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে আরেকটি বড় কৃতিত্বের মালিক হলেন কুক। এই ইনিংসে যখন তার রান ৭৬ তখনই টেস্টে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার (১২,৪০০) রানকে টপকে গেলেন। টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহের তালিকার পঞ্চম স্থানে এখন অ্যালিস্টার কুক। সেঞ্চুরিটা পুরো হওয়ার পর কুক ভারতীয় বোলারদের বোলিং নিয়ে নতুন ডিস রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যেন! এই বোলিং যে তখন তার কাছে ভীষণ সুস্বাদু! ওভাল টেস্ট জেতার মতো পুঁজিও ততক্ষনে যোগাড় করে ফেলেছে ইংল্যান্ড। ম্যাচের সবকিছুই যেন হচ্ছিল ইংল্যান্ডের চাহিদা মতো!
বিদায়-এই শব্দটাই কেমন যেন বিষাদমাখা। তবে সেই বিদায়পর্ব যে হাসিমুখে আনন্দ নিয়ে শেষ করতে পারে, সেই তো বড় বিজয়ী।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক সেই অনন্য বিজয়ীদের একজন!
অভিষেক এবং বিদায়ী টেস্টে সেঞ্চুরির কীর্তিমানরা
রোজনাল্ড ডাফ (অস্ট্রে) ১০৪, ইংল্যান্ড ১৯০২ সালে ১৪৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড ১৯০৫ সালে
উই, পন্সফোর্ড (অস্ট্রে) ১১০, ইংল্যান্ড ১৯২৪ সালে ২৬৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড ১৯৩৪ সালে
গ্রেগ চ্যাপেল (অস্ট্রে) ১০৮, ইংল্যান্ড ১৯৭০ সালে ১৮২, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ১৯৮৪ সালে
মোঃ আজহারউদ্দিন (ভারত) ১০৪*, ইংল্যান্ড ১৯৮৪ সালে ১০২, প্রতিপক্ষ দ.আফ্রিকা ২০০০ সালে
অ্যালিস্টার কুক (ইংল্যান্ড) ১০৪*, ভারত ২০০৬ সালে ১৪৭, প্রতিপক্ষ ভারত, ২০১৮ সালে