পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত ‘যথারীতি’ ফাইনালে

ফুটবল, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 01:20:08

ভারত ৩ : পাকিস্তান ১

ম্যাচে হট ফেবারিট ছিল ভারত। সেই মর্যাদা রেখেই ভারত সেমিফাইনাল জিতল। পাকিস্তানকে হারাল ৩-১ গোলে। যথারীতি আরেকবার নাম লেখাল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। টুর্নামেন্টের ১২টি আসরে ভারত এনিয়ে ১১ বার ফাইনালে উঠে এল। সবমিলিয়ে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক এই টুর্নামেন্ট জিতেছে ৭বার।

ভারত-পাকিস্তানের বুধবার রাতের সেমিফাইনালের সবগুলো গোলই হলো দ্বিতীয়ার্ধে। ভারতের প্রথম দুই গোলের নায়ক একজন-মানভির সিং। তরুণ এই স্ট্রাইকার আর্ন্তজাতিক ফুটবলে ভারতের হয়ে এই প্রথম গোল পেলেন। তাও আবার কোন ম্যাচে? সেমিফাইনালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে! ভারতের হয়ে এটি তার চতুর্থ আর্ন্তজাতিক ম্যাচ। কিন্তু ক্যারিয়ারের বাকি সময়জুড়ে এই ম্যাচে নিজের দুটো গোল নিয়ে গল্প করার অনেক বড় উপলক্ষ পেয়ে গেলেন মানভির সিং। ভারতের তৃতীয় গোলের নায়ক বদলি খেলোয়াড় সামিত পাসি। ম্যাচের শেষদিকে পাকিস্তানের হয়ে সান্ত¦নসুচক একটি গোল শোধ করেন পাকিস্তানের স্ট্রাইকার হাসান বশির।

১৫ সেপ্টেম্বর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারত লড়বে মালদ্বীপের বিপক্ষে। বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে মালদ্বীপ ৩-০ গোলে নেপালকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট পায়।

বৃষ্টিভেজা মাঠে প্রথমাধের্ই আক্রমণের তেজ বাড়িয়ে পাকিস্তান সীমান্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারত। পাকিস্তানের গোলকিপার ইউসুফ ইজাজ বাটকে পোস্টে ব্যতিব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। কিন্তু একগাদা আক্রমণ করলেও এই অর্ধে গোলের দেখা পায়নি ভারত। আর তাই দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিট থেকে আরেকবার পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপাল ভারতের আক্রমণভাগ। এই অর্ধের শুরুতেই গোলের আনন্দে হাসল ভারত। বামদিক থেকে বল নিয়ে পাকিস্তানের ডি বক্সে ঢুঁকে পড়েন মাঝমাঠের খেলোয়াড় আশিক কুরুনিয়ান। ক্রস ফেলেন পাকিস্তানের গোলমুখে। পাশে থাকা এক মার্কারকে গতিতে পেছনে ফেলে সেই ক্রসে পা ছোঁয়ান মানভির সিং। সেই টোকায় বল পাকিস্তানের জালে, গো..ও.. ল! ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পর পাকিস্তান গোল শোধের চেষ্টা চালায়। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় যে ‘পরিচ্ছন্নতার’ ছাপ নেই। বরং শারীরিক শক্তি প্রয়োগের চেষ্টাই একটু বেশি করে পাকিস্তান। সেই ফাঁকে ৬৯ মিনিটের সময় দ্বিতীয় গোলটা তুলে নেয় ভারত। এবারো গোলদাতা সেই মানভির সিং। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে ডানদিক থেকে একেবারে ফাঁকায় পাকিস্তানের ডি বক্সে চলে আসেন মানভির। সামনে বেড়ে এসেও পাকিস্তানের গোলকিপার শেষ রক্ষা করতে পারেননি। মানভিরের জোরাল শট দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের জালে, গো..ও..ল! 

এবং এই গোলের সঙ্গেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের স্বপ্ন সিঁড়ির পথ পেয়ে গেল ভারত।

প্রথমার্ধে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ প্রচুর হল। সেই লড়াইয়ের হিসেব প্রায় সমান সমান। সবমিলিয়ে শুরুর ৪৫ মিনিটে পাকিস্তানে গোলপোস্টে ভারত শট নেয় ১১টি। পাকিস্তান শট নেয় ৯টি। কিন্তু কোন দলই গোল করতে পারেনি। আক্রমণের শুরুটা উভয় দলের বেশ ভাল হয়। কিন্তু সেই আক্রমণ থেকে গোল তুলে নিতে হলে যে ফিনিশিংয়ের প্রয়োজন সেটাই শুরুর অর্ধে করতে পারেনি উভয় দল। তবে বল দখল এবং ম্যাচে প্রতিপত্তির বিচারে এই অর্ধে ভারত কিছুটা এগিয়ে থাকার দাবি করতেই পারে। এই সময়টায় ৭টি কর্নার পেলেও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি ভারত। উভয় দল গোল করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু স্ট্রাইকাররা ফিনিশিংটা যে দিতে পারেননি।

ম্যাচের ২৫ মিনিটের সময় ভারতের স্ট্রাইকার ফকির হাজী কাসাম চৌধুরী পেনাল্টি বক্সের সামনে থেকে যে গোল মিস করেন সেই আক্ষেপ তাকে পোড়াবে। সহযোগি স্ট্রাইকার মানভির সিংয়ের বাড়ানো ক্রসে পেনাল্টি বক্সের সামনে থেকে শট নেন। কিন্তু বল সোজা পাকিস্তান গোলকিপার ইউসুফ ইজাজ বাটের হাতে তুলে দেন তিনি। নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় ভারত।

৩১ মিনিটের সময় ভারতের গোলকিপার বিশাল কায়েত ব্যাকপাস থেকে আসা বল হাতে ধরে বিপদ বাধান। রেফারি ফ্রিকিকের বাঁশি বাজান। ছোট ডি বক্সের রেখার সামনে পাওয়া সেই ফ্রিকিকও কাজে লাগাতে পারেনি পাকিস্তান। স্ট্রাইকার হাসান বশির ফ্রিকিকটা নষ্ট করেন।

গোলশূণ্য প্রথমার্ধ। সবমিলিয়ে চার গোলের দ্বিতীয়ার্ধ। সঙ্গে দুটো লালকার্ড। এই পরিসংখ্যান জানাচ্ছে উত্তেজনার যা কিছুই মিলেছে সবই তা শেষার্ধে। শেষের দিকে আবার ধাক্কাধাক্কি ও ঘুষাঘুষি করার অপরাধে রেফারি একই সঙ্গে পাকিস্তানের মহসিন আলী এবং ভারতের লালাইনজুলা চিনাটেকে লালকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বহিস্কার করেন। বেচারা চিনাটোর দুঃখটা একটু বেশি। দল ফাইনালে উঠে গেছে, আর সেই ফাইনালে তিনি দর্শক!

এ সম্পর্কিত আরও খবর