জিতলেও বাংলাদেশ, হারলেও বাংলাদেশ’

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 07:51:16

সেটা ছিল টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ। সেই ম্যাচ শেষ হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচও মাঠে গড়িয়েছে। দ্বিতীয় সেই ম্যাচও শেষ হয়েছে। কিন্তু এশিয়া কাপ ক্রিকেট যে এখনো ‘বুঁদ’ হয়ে আছে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই! আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে মুশফিকের সেঞ্চুরি এবং তামিমের একহাতে ব্যাটিংয়ের রোমাঞ্চে আটকে আছে এবারের এশিয়া কাপ ক্রিকেট, এখনো!

যে ম্যাচে বাংলাদেশ ১৩৭ রানের রেকর্ড ব্যবধানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। যে ম্যাচে মুশফিক হার না মানা সেঞ্চুরি করেছেন। যে ম্যাচে আহত তামিম ইকবাল হাসপাতাল ঘুরে আবার মাঠে ফিরে এসে একহাতে ব্যাট করেছেন! কোন সন্দেহ নেই এশিয়া কাপের এই ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের সঙ্গে আরো অনেককিছুই অর্জন করেছে। যার সারমর্ম একটাই- জেতার জেদ! দলের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার যে অনন্য উদাহরণ তামিম ইকবাল এই ম্যাচে তৈরি করেছেন; তা পুরো দলকে যেন নতুন এক প্রাণশক্তি এনে দিয়েছে।

রোববার, ১৬ সেপ্টেম্বর ম্যাচ পরবর্তী দিনের পুরোটাই জয়ের আমেজে কেটেছে বাংলাদেশ দলের। নির্ধারিত অনুশীলনের সেশন ছিল। কিন্তু সেটা বাতিল করা হয়। এমনিতেই হাইভোল্টেজ ম্যাচ জিতে ক্লান্ত পুরো দল। তাছাড়া দুবাইয়ের গা ঝলসানো গরম থেকে দলের খেলোয়াড়দের রক্ষা করতেও এদিন ছুটির মেজাজে কাটায় বাংলাদেশ দল। তবে সেই আনন্দের মধ্যেও পরের ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনায় ঠিকই বসে টিম ম্যানেজমেন্ট। আফগানিস্তানকে দ্বিতীয় সেই ম্যাচে হারালেই যে এবারের এশিয়া কাপের সুপার ফোর নিশ্চিত বাংলাদেশের।

টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে থেকেই কোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচক প্রায় সবারই একটা চাওয়া ছিল-‘প্রথম ম্যাচটা আমরা জিততে চাই। প্রথম ম্যাচ জিতলে টুর্নামেন্টের সামনের পথে হাঁটা সহজ হয়ে যায়।’

প্রথম ম্যাচ জেতার বাংলাদেশের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। তবে ১৩৭ রানের জয়ের  এই ম্যাচে তামিম-মুশফিক আরও যা এনে দিয়েছেন সেটা আসলে কোন তুল্যমূল্যে দিয়ে বিচার করা যাবে না! টুর্নামেন্টের র‌্যাঙ্কিংয়ে হয়তো বাংলাদেশ টপ ফেবারিটদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। তবে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ যে ক্রিকেটীয় স্পিরিটের প্রদর্শনী করেছে তাতেই এখন এই টুর্নামেন্টে দল হিসেবে বাংলাদেশের বুক সবচেয়ে চওড়া।

দুর্নিবীত সাহসের অন্য নাম এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল! অবশ্য বাংলাদেশ ভালই জানে সামনের ম্যাচে ভাল না খেললে পেছনের সাফল্য কেউ বেশিদিন মনে রাখে না। এই ক্রিকেট দল সেই নিষ্ঠুরতাও কম দেখেনি! এই তামিম ইকবাল বা এই মুশফিক রহিমকেও অনেক সময় অযথাই নিষ্ঠুর সব সমালোচনা শুনতে হয়েছে। সম্ভবত সেসব কঠিন দিনের কথা স্মরণ করে শ্রীলঙ্কা ম্যাচের সেরা মুশফিক রহিম একটা কথা মনে করিয়ে দিলেন-‘দলের প্রতি, দেশের প্রতি আমাদের ডেডিকেশন সবসময়েই থাকে। এখন হয়তো আমাদের দুজনের জন্য এই ম্যাচে দলটা জিতেছে দেখে ফোকাসটা শুধু এখানেই আটকে আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ম্যাচে আমরা হারি, সেই ম্যাচেও আমাদের ডেডিকেশন এমনই থাকে।’

যখন দল কোন ম্যাচে হারে, সঙ্গে সঙ্গে একনাগাড়ে খেলোয়াড়দের শুনতে হয়-‘আরে দুর এদের কোন কমিটমেন্ট নেই। দায়বদ্ধতা নেই।’ দুর এবং কাছ থেকে শোনা এমনসব তীর্যক বালখিল্য মন্তব্য ক্রিকেটারদের কষ্টটা আরও বাড়ায়। মাঠে তো তারাই খেলেন। তারা ভালই জানেন, হারের যন্ত্রণা- বেদনা কেমন। আর প্রতিদিন প্রতি ম্যাচ তো পৃথিবীর কোন দলই জেতে না। তাই ক্রিকেটারদের সাফল্যের আনন্দ যেমন সবাই ভাগাভাগি করে নেন। ঠিক তেমনি হারা ম্যাচেও তারা কাঁধের ওপর সহমর্মিতার স্পর্শ চান, অহেতুক সমালোচনার কুঠারঘাত নয়! 

জিতলেও বাংলাদেশ, হারলেও বাংলাদেশ-সমর্থকদের সমস্বরে এই গানই জোরে সোরে গাইতে বলছেন মুশফিক এবং মাশরাফিরা!

এ সম্পর্কিত আরও খবর