কার পাপের শাস্তি পাচ্ছে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম?

ক্রিকেট, খেলা

গনেশ দাস, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:50:14

বগুড়া: কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্লাইভ লয়েড এসেছিলেন স্টেডিয়াম নির্মাণের শুরুতেই। সেই সময় তিনি বলেছিলেন,‘এটি বাংলাদেশের সেরা স্টেডিয়াম হবে।’ এরপর একে একে এসেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম, শ্রীলংকার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারাসহ বিশ্বের অনেক নামীদামি ক্রিকেটার। সবাই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামকে।

স্টেডিয়ামের ডায়েরিতে তাদের মন্তব্যগুলো আজো সংরক্ষিত আছে। শুধু বিদেশি ক্রিকেটার নয়, দেশের তারকা ক্রিকেটারদেরও পছন্দের সেরার তালিকায় এই স্টেডিয়ামের নাম।

খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাসার, মোহাম্মদ আশরাফুল, মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক সবাই এই স্টেডিয়ামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। খ্যাতিমান স্পোর্টস রিপোর্টাররাও প্রশংসা না করে পারেননি। কিন্তু এতকিছুর পরেও দীর্ঘ এক যুগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে রয়ে গেছে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম। এরই মধ্যে বাতিল হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। কিন্তু কেন? কার পাপের শাস্তি পাচ্ছে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম? কোন অপরাধে আন্তর্জাতিক দুনিয়া থেকে ছিটকে গেল দেশের অন্যতম সেরা এই স্টেডিয়ামটি?

২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পা রাখে বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম। ২০০৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেট বিশ্বে নতুন পরিচিত পায় বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। ২২ ফেব্রুয়ারি এই মাঠেই শ্রীলংকাকে প্রথম হারানোর স্বাদ পায় টাইগাররা। এই ভেন্যুতে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটিও হয় শ্রীলংকার সঙ্গেই।

এ যাবৎ মোট ৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে এই মাঠে। এরমধ্যে শ্রীলংকার বিপেক্ষ ২টি, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ২টি এবং কেনিয়ার বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। মজার ব্যাপার হল ওই ৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে ৪টিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাই এই ভেন্যুকে বাংলাদেশ দলের জন্য লাকি ভেন্যু বলা হয়।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল- ২০০৬ সালের ৫ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে শেষ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরপর দীর্ঘ ১২ বছরেও শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামে আর কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে স্টেডিয়াম সংস্কারে কোনো অর্থও বরাদ্দ দেয়নি বিসিবি। ফলে স্টেডিয়ামের গ্যালারিগুলোর রঙ নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রাউন্ডসম্যানদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আউটফিল্ড মোটামুটি ভালো মনে হলেও একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে। নতুন করে মাটি না ফেলায় দিনের পর দিন স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে আউটফিল্ড। ভিআইপি গ্যালারি, মিডিয়া বক্সসহ স্টেডিয়ামের প্রায় পুরো অংশ জুড়েই ভাঙাচোরা অবস্থা। স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তাগুলোর অবস্থাও খারাপ। বছরের পর বছর সংস্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সবকিছু।

দীর্ঘদিন কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন না করায় এই স্টেডিয়ামের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নজরদারি অনেকটাই কমে গেছে। এই সুযোগে স্টেডিয়ামের অবকাঠামোগত ক্ষতি সাধনে তৎপর হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতকারীরা। বিশেষ করে স্টেডিয়ামের চার পাশে স্থাপিত চারটি ফ্লাডলাইটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রক্ষা করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার ফ্লাডলাইটের তার চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার সদর থানায় ৩ বার সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ৪ বার। কিন্তু তারপরও স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল জানান, স্টেডিয়ামের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হলেও তারা স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় খুব বেশি ভূমিকা পালন করতে পারছে না। পুলিশ ফাঁড়ির দুইশো গজের মধ্যেই বারবার ফ্লাডলাইটের যন্ত্রাংশ চুরির চেষ্টা করছে দুষ্কৃতকারীরা। এ বিষয়ে একাধিকবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেও কাজ হয়নি।

বগুড়ার স্থানীয়রা জানান, দেশের অন্যতম সেরা শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামটিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কেন অবহেলায় ফেলে রেখেছে সেটা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নতমানের স্টেডিয়ামের অভাবে দেশের ক্রিকেট যখন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, প্রয়োজন মেটাতে যখন কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে, তখন একটি প্রতিষ্ঠিত স্টেডিয়ামকে কেন ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে?

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম শুধু বগুড়ার সম্পদ নয়, উত্তরবঙ্গের একমাত্র আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামের মাধ্যমে গোটা উত্তরাঞ্চলের তরুণরা ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠত। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ স্টেডিয়ামটিকে ফেলে রাখা হয়েছে। কার স্বার্থে এমন সুন্দর একটি স্টেডিয়াম ধ্বংস করা হচ্ছে সেটা আমার বোধগম্য নয়। আমরা বগুড়াবাসী দাবি জানাই- অবিলম্বে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হোক।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর