ইমরুলের ঝড়ো সেঞ্চুরি, বাংলাদেশ ২৭১

ক্রিকেট, খেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 05:39:40

আদর্শ শুরু বলতে যা বোঝায় তা পায়নি বাংলাদেশ। ১৭ রানে নেই দুই উইকেট। মুশফিক-মিঠুন ভাল শুরু করেও ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। ২৮ ওভারে ১৩৭ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ শঙ্কায় ছিল দুশো কি পেরুবে দল?

সেই দল ৫০ ওভার শেষে তুলল ২৭১ রান। ব্যাটিংয়ে নিজের কমফোর্ট জোন ফিরে পেয়ে ইমরুল কায়েস সেঞ্চুরি হাঁকালেন। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। ১৪০ বলে ১৪৪ রানের তার এই ইনিংস পেছনের অনেক ‘বলা না বলা’ কথার জবাব হয়ে গেল। সম্ভবত এখন অনেকদিন দলে জায়গা হারানোর ভয় তাকে না পেলেও চলবে! যেভাবে খেলছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তামিম ইকবালের ১৫৪ রানের সর্বোচ্চ রান রেকর্ডটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিন্তু তামিমের সেই রেকর্ড থেকে সামান্য দুরুত্বে এসে থামলেন ইমরুল। তার ১৪৪ রানের ইনিংস ওয়ানডেতে এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মর্যাদা পাচ্ছে। ঠিক সমান এই রান নিয়ে মুশফিকুর রহিমও এই তালিকায় এখন যৌথভাবে দ্বিতীয়স্থানে।

শেষের পাঁচ ওভারে ইমরুল কায়েস ও সাইফুদ্দিন ব্যাট হাতে যা করলেন তাকে এককথায় বলে-ঝড়! ৪৫ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ২১৫ রান। শেষের পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ ছক্কা-চারের ঝড় তুলে আরো ৫৬ রান যোগ করে। শেষের এই অংশে মিরপুরের দর্শকরা টি-টুয়েন্টির ব্যাটিং দেখলেন।

ক্যারিয়ারের তৃতীয় এই সেঞ্চুরির পথে যোগ্য সঙ্গী হিসেবে ইমরুল পান সাইফুদ্দিনকে। লোয়ার অর্ডারে ম্যাচ ফিনিসারের খোঁজ চালাচ্ছে বাংলাদেশ অনেকদিন ধরে। সাইফুদিনের ৬৯ বলে ৫০ রানের ইনিংস জানান দিল-এই খোঁজের তালিকায় তার নামও রাখতে হবে!

শুরুটা মোটেও ভাল হয়নি বাংলাদেশের। লিটন দাস শুরু থেকেই যেভাবে ছটফট করছিলেন তাতেই স্পষ্ঠ হয়-সমস্যায় পড়ছেন তিনি। বারদুয়েক শর্ট বলে পুল করার চেষ্টা চালান। ব্যাটে-বলে হয়নি। কাভারে একবার ক্যাচ দিয়েও রক্ষা পান। তবে সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। উইকেট ছেড়ে মারতে বেরিয়ে এসে নিজেই ‘হারিয়ে’ গেলেন। ১৪ বলে তার ৪ রানের ইনিংস বা আউটের ধরন-কোনকিছুতেই প্রশংসা পাওয়ার মতো কিছুই যে নেই!

দলীয় ১৬ রানে ভাঙলো ওপেনিং জুটি।

জীবনের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ফজলে রাব্বী কোন রানই করতে পারলেন না। মিরপুরের এই উইকেটে শুরুতে পেস বোলাররা একটু বাড়তি সুবিধা পাবেন এটা জেনেই জিম্বাবুয়ে আক্রমণের শুরুতে বেশ কিছু বল ঠুকে দেয়। তেমনই এক ঠুকে দেয়া বলের লাইন থেকে সরে দাড়াতে পারেননি ফজলে রাব্বী। বল তার ব্যাটের কোনা ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে যায়। উইকেটরক্ষক ব্রেন্ডন টেইলর হাইজাম্পের কায়দায় লাফিয়ে উঠে একহাতে সেই ক্যাচ নেন। বেচারা ফজলে রাব্বীর অভিষেক ওয়ানডে শূণ্য রানেই শেষ।

১৭ রানে বাংলাদেশ হারালো ২ উইকেট।

শুরুর সেই ধাক্কার পর প্রতিরোধ ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। উইকেটে শুরুর তেজও ততক্ষণে কমে এসেছে। এই জুটিতে বাংলাদেশের রান যেভাবে সামনে বাড়ছিলো তাতে মনে হচ্ছিল ঠিক পথে ফিরে এসেছে দলের ইনিংস। শুরুতে অস্বস্তিতে থাকা ইমরুল কায়েস উইকেটে জমে যান। ত্রিপানোর বলে সাইটস্ক্রিনের ওপর তার প্রথম ছক্কাটা জানিয়ে দিল-এই ম্যাচে ‘বড়কিছু’ করতেই নেমেছেন তিনি। মুশফিকের ব্যাটিং সবসময়ে সৌন্দর্য্য ছড়ায়। এই ম্যাচেও তাড়াহুড়ো করছিলেন না। কিন্তু লেগস্পিনার মাভুতার যে বলে মুশফিক আউট হলেন সেটা মোটেও উইকেট নেয়ার মতো কোন বল নয়। উইকেটের পেছনে ক্যাচটা নিয়েই ব্রেন্ডন টেইলর উৎসবে মেতে উঠেন। কিন্তু আম্পায়ার তাতে সায় দেননি। সঙ্গে সঙ্গে টেইলর কোনদিকে না তাকিয়ে রিভিউ’র আবেদন জানান। রিভিউতে দেখা গেল বল মুশফিকের ব্যাটের নিচের অংশের কোনা ছুঁয়ে এসেছে! ১৫ রান করে মুশফিক আউট।

৬৬ রানে ৩ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

মোহাম্মদ মিঠুন শুরুটাই করেন আক্রমনের তোড়ে। প্রেসবক্স এন্ডের দিকে সিকান্দার রাজাকে টানা দুই বলে দুটো ছক্কা হাঁকান দর্শনীয় কায়দায়। যাকে বলে ক্লিন এন্ড সুইট সিক্স! তবে তার আউটের ধরনটাও হল আনাড়ি মার্কা। জায়গায় দাড়িয়ে কাইল জার্ভিসের বলে আসলে কি করতে হবে এটা নিয়ে দোটানায় পড়ে খোঁচা মেরে বসলেন। উইকেটের পেছনে টেইলের গ্লাভসে আরেকটি ক্যাচ জমা পড়ল। ৪০ বলে ৩৫ রান তুলে মোহাম্মদ মিঠুন আউট। চতুর্থ উইকেটে ৭১ রানের জুটি ভাঙ্গল।

১৩৭ রানে হারালো বাংলাদেশ ৪ নম্বর উইকেট।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ স্কোরারদের বেশি কষ্ট দিলেন না। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন কোন রান না করেই। খানিকবাদে তাকে অনুসরণ করলেন মেহেদি মিরাজ। এই দুজনেই একই বোলারের বলে আউট। আউটের ধরণও প্রায় একই। উইকেটের পেছনে তাদের ক্যাচও নিলেন সেই একই জন- ব্রেন্ডন টেইলর।

১৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তাহলে বড় বিপদে!

তবে সেই শঙ্কা উড়ে গেল ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরি ও সাইফুদ্দিনের ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরির ইনিংসের সামনে। সপ্তম উইকেট জুটিতে এই দুজনে মিলে ১২৭ রান যোগ করলেন। এই একটা জুটিই বদলে দিলো ইনিংসে চালচিত্র।

শুরুতে এবং মাঝে শঙ্কায় থাকা বাংলাদেশ শেষের ঝড়ে নির্ভার প্রায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২৭১/৮ (৫০ ওভারে, লিটন ৪, ইমরুল ১৪৪, ফজলে রাব্বী ০, মুশফিক ১৫, মিঠুন ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ০, মেহেদি ১, সাইফুদ্দিন ৫০, মাশরাফি ২*, মুস্তাফিজ ১*, জার্ভিস ৪/৩৭, চাতারা ৩/৫৫)

এ সম্পর্কিত আরও খবর