জিম্বাবুয়ে হোয়াইটওয়াশ

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 19:21:42

একেই বলে একক আধিপত্য! একেবারে পাত্তাই পায়নি জিম্বাবুয়ে। ঠিক যেন খড়কুঁটোর মতোই উড়ে গেল বাংলাদেশের সামনে তারা এই সিরিজে। তিন ম্যাচের সবগুলোতে দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ সিরিজ জিতলো পরিস্কার ৩-০ ব্যবধানে। যথারীতি আরেকবার হোয়াইটওয়াশড জিম্বাবুয়ে।

সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর জিম্বাবুয়ে প্রতিদ্বন্দিতা গড়তে পারে বলে একটা ধারণা হচ্ছিল। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে স্কোরবোর্ডে ২৮৬ রানের বড় সঞ্চয় করে জিম্বাবুয়ে সেই লড়াইয়ের প্রাথমিক ইঙ্গিত দিয়েছিলো। বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম বলে লিটন দাসকে ফিরিয়ে দিয়ে শুরুটাও করেছিলো তার নাটকীয় ভঙ্গিতে। কিন্তু কিসের লড়াই? কিসের প্রতিদ্ব›িদ্বতা? মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের গড়া বড় টার্গেট টপকে গেল বাংলাদেশ। ম্যাচ জিতলো ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ৪৭ বল বাকি থাকতেই এই ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ। কেমন দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ এই ম্যাচ জিতলো সেটা স্পষ্ঠ এই সংখ্যাতত্ত্বেই!
সিরিজের শেষ এই ম্যাচে সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসের ব্যাটের কাছেই যে মিসমার জিম্বাবুয়ে! সৌম্য করলেন ৯২ বলে ১১৭ রান। ৯ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায় দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন সৌম্য। সিরিজের শেষ ম্যাচে সুযোগ পেলেন। আর সুযোগ পেয়েই সেঞ্চুরি এবং ম্যাচসেরা!

আর ইমরুল? সিরিজের শুরু করেছিলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। মাঝের ম্যাচটায় মাত্র ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন। আর সিরিজ শেষও করলেন আরেকটি দাপুটে সেঞ্চুরি দিয়ে! সিরিজে তার রান সবশুদ্ধ ৩৪৯। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে এটি নতুন রেকর্ড। আগের ৩১২ রানের রেকর্ডটি ছিল তামিম ইকবালের।

সিরিজের তিন ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ব্যাটিং করলো জিম্বাবুয়ে এই ম্যাচেই। মিডলঅর্ডারে তিন চমৎকার জুটি গড়ে দলের রান নিয়ে গেল ২৮৬ রানে। শন উইলিয়ামস সেঞ্চুরি পেলেন। ব্রেন্ডন টেইলর করলেন ৭৫ রান। সিকান্দার রাজার ব্যাট হাসলো ৪০ রানে। কোন চট্টগ্রামের মাঠে ২৮৬ রানের স্কোরকে ভাল না বলার কোন উপায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশ যে তারচেয়েও ভাল ব্যাটিং করলো। স্কোরবোর্ডে কোন রান জমা হওয়ার আগেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওপেনার লিটন দাস ইনিংসের প্রথম বলেই শূণ্য রানে এলবিডব্লু। রিভিউ নিয়ে রক্ষা হয়নি তার। সেই শূণ্য থেকে শুরু করা সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যা করলেন সেটা গড়লো নতুন ইতিহাস। এই জুটিতে তাদের ২২০ রানের সঞ্চয় ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। শুধু তাই নয়, যে কোন উইকেট জুটিতেও বাংলাদেশের হয়ে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর গড়া ২২৪ রানের রেকর্ড জুটি এখনো শীর্ষে।

ইমরুল কায়েস ৪১ বলে ৫০ করেন। সৌম্য সরকারের হাফসেঞ্চুরি আসে ৫৪ বলে। কিন্তু এরপরের অধ্যায়ের কাহিনী ঠিক উল্টো। হাফসেঞ্চুরির পর সৌম্য সরকার ছক্কা-চারের ঝড় তুলে মাত্র ৮১ বলে নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন। সেঞ্চুরির পর সৌম্যর ব্যাট আরো যেন ক্ষুরধার তরবারি হয়ে উঠে। ৯২ বলে ১১৭ রান করে সৌম্য সরকার আউট হতে কিছুটা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে জিম্বাবুয়ে। অপরপ্রান্তে ইমরুল কায়েস তখন কিছুটা ধীরস্থির। কারণ আগের ম্যাচেই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মাত্র ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরির সুযোগ হারিয়েছিলেন তিনি। এই ম্যাচে সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে তাই বাড়তি সতর্কতা নিলেন। ৯৮ বলে তার ব্যাটও হাসলো সেঞ্চুরির হাসিতে। সিরিজে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি সেঞ্চুরি করতে ইমরুল কায়েসকে খেলতে হয়েছিলো ৭৩টি ম্যাচ। আর পরের দুই সেঞ্চুরি পেলেন মাত্র ৩ ম্যাচের ব্যবধানে!

জিম্বাবুয়ে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ হওয়া এই সিরিজের দুঃখগাথা যখনই জিম্বাবুয়ের মনে পড়বে তখনই তারা আরেকবার সমীহের সঙ্গে একটা নাম উচ্চারণ করবে-ইমরুল কায়েস!

যে সিরিজে ইমরুল কায়েস তিন ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। রেকর্ড ৩৪৯ রান তুলেছিলেন। এই ওয়ানডে সিরিজের ট্রফির গায়ে নতুন একটা শব্দমালা খোদাই করা দেয়া যেতেই পারে-‘ইমরুলের সিরিজ!’

সংক্ষিপ্ত স্কোর: জিম্বাবুয়ে ২৮৬/৫ (৫০ ওভারে, মাসাকাদজা ২, চেপাস ০, টেইলর ৭৫, শন উইলিয়ামস ১২৯*, সিকান্দার রাজা ৪০, পিটার মুরস ২৮, চিগুম্বুরা ১*, অতিরিক্ত ১১, আবু হায়দার ১/৩৯, সাইফুদ্দিন ১/৫১, নাজমুল ইসলাম ২/৫৮)। বাংলাদেশ ২৮৮/৩ (৪২.১ ওভারে, লিটন দাস ০, সৌম্য ১১৭, ইমরুল ১১৫, মুশফিকুর ২৮*, মিঠুন ৭*, মাসাকাদজা ১/৭১)। ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: সৌম্য সরকার। সিরিজ সেরা: ইমরুল কায়েস।

এ সম্পর্কিত আরও খবর