বিপিএলে দুর্বার ফর্মে রয়েছেন সাকিব আল হাসান। টানা পাঁচ ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ছিনিয়ে নেয়ার নতুন এক মাইলফলক গড়েছেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। এর আগে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে টানা পাঁচ ম্যাচে সেরা ক্রিকেটার হওয়ার কীর্তি যে অন্য কেউ গড়তে পারেননি। কিন্তু এমন দুরন্ত পারফরম্যান্সের পরও আইপিএলে সাকিবের দল না পাওয়া একরকম অবিশ্বাস্যই।
ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসরে এমন দুরন্ত পারফরম্যান্সের পরও এবারের আইপিএলে দল পাননি সাকিব। ২ কোটি রুপির ভিত্তিমূল্য নিয়েও নিলামে অবিক্রিত থেকে গেছেন এ ক্রিকেট মহাতারকা। কোনো দলই তাকে কিনতে আগ্রহ দেখায়নি।
কিন্তু কেন? সাকিবের সুপারস্টারকে কেন কোনো দল কিনল না? এর কারণে হিসেবে বিভিন্ন জন দেখছেন বিভিন্ন কারণ। গত মৌসুমে আইপিএলে তার অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স কাল হতে পারে। গত মৌসুমে ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে সাকিবকে কিনে নিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু মৌসুমটা তার মোটেই ভালো কাটেনি। সাকিব ৮ ম্যাচে পান মাত্র ৪ উইকেট। ব্যাট হাতে দলকে এনে দেন কেবল ৪৭ রান। যে কারণে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের কেকেআর বাংলাদেশের তারকা এ অলরাউন্ডারকে ছেড়ে দেয়। গত মৌসুমের এ বাজে পারফরম্যান্সই হয়তো বিবেচনায় নিয়েছে দলগুলো। শুধু গত মৌসুম নয়। ২০১৪ সালের পর আইপিএলের কোনো মৌসুমে তেমন চমক দেখাতে পারেননি সাকিব। খেলেছেন গড়পড়তা।
অনেকে আবার দেখছেন সাকিবের বয়সটা। আগামী মাসেই ৩৫ এ পা দিতে যাচ্ছেন এ ক্রিকেট মহাতারকা। এ কারণে হয়তো কোনো দল তাকে কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। শ্রীলঙ্কা সিরিজে দেশের জার্সি গায়ে জড়ালেও দক্ষিণ আফ্রিকা না গিয়ে আইপিএলে খেলার সুযোগ ছিল সাকিবের হাতে। তাতে করে তিনি ভারতীয় এ টি-টোয়েন্টি আসরে খেলতে পারতেন পাঁচ সপ্তাহ। কিন্তু বিশ্বে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের বিকল্প পারদর্শী ও দক্ষ ক্রিকেটারের যে অভাব নেই। তার ভিত্তি মূল্যটাও বেশি হতে পারে অনেক দলের কাছে।
কিন্তু সাকিবের সহধর্মিণী উম্মে আহমেদ শিশির ওপরের কারণ মানতে নারাজ। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে জাতীয় দলে সময় দেবেন বাংলাদেশের এ সেরা ক্রিকেটার। ঠিক এ কারণে এবারের আইপিএলের পুরো মৌসুমটা খেলা সম্ভব নয়। পুরো মৌসুমে সাকিবকে পাবে না বলেই নিলামে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো আগ্রহ দেখায়নি। অথচ নিলামের আগে বেশ কয়েকটা দল সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শিশির লিখেন, ‘আপনারা খুব বেশি উত্তেজিত হওয়ার আগেই জানিয়ে দেই, কয়েকটা দল তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছিল। জানতে চেয়েছিল সে পুরো মৌসুম খেলতে পারবে নাকি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য সে পারতো না! এই কারণেই তাকে নিলাম থেকে কেউ নেয়নি।’
দেশের হয়ে না খেলে সমালোচকরা প্রায়ই সাকিবকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে অপবাদ দেন। এবার শ্রীলঙ্কা সফরে না খেলে আইপিএলে দল পেলে কি সাকিবকে তারা ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলতেন। নিন্দুকেদের এমন খোঁচা মারতেও ভুলেননি শিশির, ‘আইপিএলে দল না পাওয়া খুব বড় কোনো বিষয়ও না, কারণ সবসময়ই পরের বছর আছে। যদি তাকে দল পেতে হতো, তাহলে শ্রীলঙ্কা সফর মিস করতে হতো। তখন কি আপনারা একই কথা বলতেন? নাকি বিশ্বাসঘাতক বানাতেন? আপনাদের উত্তেজনায় পানি ঢেলে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।’
সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান আকাশ চোপড়ার কথায়ও সাকিবকে পুরো মৌসুম জুড়ে না পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে, ‘সাকিবের প্রাপ্যতা একটি ব্যাপার। কত সময় তাকে পাওয়া যাবে, এটা নিশ্চিত নয়। এটি বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। আরেকটি ব্যাপার হলো, সে খুব ভালো অলরাউন্ডার হলেও আইপিএলে তার পরিসংখ্যান খুব সমৃদ্ধ নয়। ভালো পারফরম্যান্স আছে, কিন্তু তার রেকর্ড অসাধারণ। এবার বিপিএলে খুব ভালো করলেও তা আসলে পাত্তা পায়নি।’
এখনো যে সাকিবের সামনে আইপিএলে খেলার সুযোগ যে নেই। সেটা নয়। আগামী বছর সুযোগ তো আসবেই। এ বছরেও আসতে পারে সুযোগ। নিলাম থেকে দল পেলেও কেউ যদি আইপিএল খেলতে না পারেন বা না খেলেন পারিবারিক, ইনজুরি বা অন্য কোনো কারণে। সেক্ষেত্রে সুযোগ পেলেও পেতে পারেন সাকিব।